শিরোনাম
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজের তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া এ সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সাক্ষ্যগ্রহণ ঘিরে সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওসি প্রদীপসহ চাঞ্চল্যকর এ মামলার ১৫ আসামিকে ফের আদালতে হাজির করা হয়েছে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণে ষষ্ঠ সাক্ষীর জেরা শেষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল তৃতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
তৃতীয় দফা সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন তিনজনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
সকালে সংশ্লিষ্ট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ফরিদ আলম বলেন, মামলার তৃতীয় দফার সাক্ষ্য চলবে ২০, ২১, ২২ সেপ্টেম্বর। এ তিন দিনে একাধিক সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করার উদ্যোগ রয়েছে।
দ্বিতীয় দফার শেষ দিন গত ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর ষষ্ঠ সাক্ষী শহিদুল ইসলামের জবানবন্দি শেষে জেরার মাধ্যমে দ্বিতীয় দফার টানা চারদিনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়।
অ্যাডভোকেট ফরিদ বলেন, আমরা সব সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা দ্রুত সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। তবে, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অসহযোগিতায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তারা সাক্ষীকে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছেন। ১৫ আসামির ১৫ জন আইনজীবী আলাদাভাবে আধাঘণ্টা করে জেরার সময় নিলে সাড়ে সাতঘণ্টা সময় লাগে। জবানবন্দি নিতেও সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। এতে আদালতের কর্মঘণ্টা ৯ ঘণ্টা এবং মধ্যাহ্ন বিরতিসহ দাঁড়ায় ১০ ঘণ্টায়। জবানবন্দি ও জেরা শেষ হওয়ায় তৃতীয় দফায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণে আদালতকে সহযোগিতা করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আদালতের সংশ্লিষ্ট আইনজীবী বাপ্পী শর্মা জানান, গত ২৩ আগস্ট শুরু হয় মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম। সাক্ষ্যগ্রহণে আদালতের নির্ধারণ করা প্রথম তিনদিনের প্রথম দিন পুরো ও দ্বিতীয় দিনের অর্ধেক সময় মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন ফেরদৌসের সাক্ষ্য ও জেরা হয়। পরে শুরু হয় সিনহার সফরসঙ্গী ও হত্যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের সাক্ষ্য। এ দুজনের সাক্ষ্য ও জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিচারকার্যের প্রথম নির্ধারিত তিনদিন। ফলে এ তিনদিনের জন্য নোটিশ পাওয়া ১৫ সাক্ষীর মধ্যে বাকি ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি জানান, গত ২৫ আগস্ট আদালত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর টানা চারদিন পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী, ৫ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাকি সাক্ষীদের মধ্যে একজনের সাক্ষ্য শুরু হলে তাকে জেরা করতেই সারাদিন চলে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনও একইভাবে একজন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা হয়। শেষদিনেও এক অবস্থা। এতে সাত দিনে সাক্ষ্য নেওয়া গেছে মাত্র ছয় জনের। মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সাক্ষ্য ও জেরার সময় ১৫ আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকায় পুরো জেলা জজ আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলাই তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ সদস্যরা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। আসামিদের ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল।