শিরোনাম
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কোটি ৩৪ লাখ নগদ লেনদেন অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়েছে। আর সন্দেহজনক ৩৩০২ লেনদেনও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নগদ লেনদেন তথ্য বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রেরণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। একইভাবে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা সন্দেহজনক লেনদেনর তথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) এসব লেনদেন পর্যালোচনা করছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মুদ্রা ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক বাজার উন্নয়নসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। সূত্র: যুগান্তর
জানতে চাইলে বিএফআইইউর উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কার্যক্রম নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সচেতনতা আগের তুলনায় অনেকে বেড়েছে। যে কারণে তাদের নগদ ও সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট আগের তুলনায় অনেক বেশি আসছে বিএফআইইউতে। তিনি আরও বলেন, এসব লেনদেন পর্যালোচনা করার পর যেগুলোতে কোনো ধরনের সমস্যা পাওয়া যায় সেগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রেরণ করা হয় আরও বিশদ অনুসন্ধানের জন্য। তবে সব নগদ লেনদেন যে খারাপ সেটিও নয়।
অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, অর্থপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি সফল হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রতিরোধে কার্যকরি কোনো অর্জন করতে পারেনি। তিনি বলেন, নগদ ও সন্দেহজনক লেনদেনের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ আছে বলে সন্দেহ আছে। তবে করোনাকালীন বিদেশে অর্থপাচার কমেছিল। ওই সময় দেশ থেকে মানুষ বিদেশে সীমিত আকারে গেছে। পুঁজি পাচারও কম হয়েছে। তবে করোনা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে অর্থপাচার আবারও বেড়েছে। এর একটি বড় উদাহরণ হলো গত দুই মাসে বৈধভাবে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স কমছে। এতে বুঝা যাচ্ছে হুন্ডি ব্যবস্থা শক্তিশালী হচ্ছে। আর হুন্ডি পন্থা শক্তিশালী হলে অর্থপাচার আরও বাড়বে।
সূত্র মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এক কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬৪৬টি ‘নগদ লেনদন’ রিপোর্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউতে পাঠানো হয়েছে। মূলত এসব হিসাবের মাধ্যমে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে এক বা একাধিক লেনদেনর মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা বা এর বেশি জমা বা উত্তোলন (অনলাইন, এটিএমসহ যেকোনো ধরনের নগদ জমা বা উত্তোলন) করা হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নিজ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউকে এসব লেনদেন সম্পর্কে রিপোর্ট করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব লেনদেন থেকে পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে কিনা এটি চিহ্নিত করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এসব নগদ লেনদেন পর্যালোচনা করে অধিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দেশ থেকে অর্থপাচারের ব্যাপারে হাজারের বেশি ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এসব প্রতিবেদন ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫৮টি ঘটনা চিহ্নিত করে বিএফআইইউ। এ ছাড়াও ২০১৬-১৭ সালে ১২১টি, ২০১৭-১৮ সালে ৬৭৭টি, ২০১৮ সালে ৫২টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৬টি ঘটনা চিহ্নিত করা হয়। এখন ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩০২টি সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে পর্যালোচনা করে যেসব ঘটনা প্রয়োজন মনে করা হয়েছে সেগুলো তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্ট্রিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্ট অনুসারে ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটিতে বাংলাদেশিদের আমানত সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিএফআইইউ এবং দুদকের তথ্য মতে, ১০টি বড় দেশে দেশের টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-সিঙ্গাপুর, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং এবং থাইল্যান্ড।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ মূল্যায়ন ব্যবস্থা মিউচুয়াল ইভ্যালুয়েশনের চতুর্থ ফলোআপ রিপোর্ট গত নভেম্বরে প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে মনিটরিং এবং তথ্য পাওয়া এমন দুটি সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। এই রিপোর্টে দেখা গেছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ৪০টি শর্ত পূরণ করতে বাংলাদেশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯টি শর্তে পুরোপুরি ভালো করেছে, অর্থাৎ সূচক হচ্ছে ‘কমপ্লাইন্স (সি)’। এ ছাড়া ২৭টি শর্তে বাংলাদেশের সূচক হচ্ছে ‘লার্জলি কমপ্লাইন্স (এলসি)’ এবং চারটির ক্ষেত্রে ‘পার্সিয়ালি কমপ্লাইন্স (পিসি)’।