শিরোনাম
আগামী ২৬ নভেম্বর দেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘নোনা জলের কাব্য’। তার আগেই চলচ্চিত্রটি দেখলেন যাদের জীবন নিয়ে তৈরি এটি সেই জেলেপাড়া ‘গঙ্গামতি গ্রামের’ মানুষ।
সোমবার (২২ নভেম্বর) রাত ৮টায় পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়নের গঙ্গামতির চর গ্রামের সমুদ্রসৈকতে পুরো চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। গঙ্গামতি গ্রামের জেলেদের জীবনচিত্র ও তাদের অভিনয় বড় পর্দায় দেখে অনেক আনন্দিত জেলেরা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মো. শহীদুল হক, সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় চলচ্চিত্রটির পরিচালকসহ উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী তাসনোভা তামান্না ও বেশ কয়েকজন কলাকৌশলী। চলচ্চিত্রটি দেখেছেন স্থানীয় শত শত মানুষ।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, এই চলচ্চিত্রের মধ্যে জেলেদের বাস্তবচিত্র তুলে ধরার জন্য পরিচালককে ধন্যবাদ জানাই। জেলেদের দুঃখ দুর্দশা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এই প্রত্যন্ত এলাকার চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। জেলেদের যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা নিয়ে কাজ করবো, যাতে জেলেরা ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারে।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন বন্ধুদের নিয়ে কুয়াকাটা ঘুরতে এসেছিলাম। তখন কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট ছেড়ে প্রায় এক মাইল হেঁটে ভেতরে চলে আসি। সময়টা ছিল সিডর আঘাত হানার তিন মাস পর। তখন আমি এই জেলেপাড়া আবিষ্কার করি। এখানে একদিকে দেখি সিডরের রেখে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞ, আর অন্যদিকে সবকিছু ভুলে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার দৃশ্য। সে সময়ই এখানকার মানুষের জীবন আমার মনে প্রভাব ফেলে। এরপর নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে এই জনপদ নিয়েই স্ক্রিপ্টের প্রথম ড্রাফটটা লিখে ফেলি।
তিনি আরও বলেন, সিনেমাটি নিয়ে আমি ৭-৮ বছর একরকম সংগ্রাম করছি। সবশেষ ২০১৮ সালে এই গ্রামের মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসায় আড়াই মাসের চেষ্টায় শ্যুটিং শেষ করি। ঢাকা থেকে মাত্র ৭-৮ জন অভিনয়শিল্পী এনেছিলাম। বাকি অনেক কাজ এই গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশুরা করেছে ক্যামেরার সামনে ও পেছনে। আমি তাদের তখন কথা দিয়েছিলাম ‘জেলেদের ছবি জেলেরাই দেখবে সবার আগে’। কথা রাখতেই আজ এখানে আবার এসেছি।
দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রান্তিক জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, আবহাওয়ার প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার লড়াই, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা এবং তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও সংস্কার এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়।
গত এক বছরের বেশি সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সাড়া জাগিয়েছে ‘নোনা জলের কাব্য’। লন্ডন, বুসান, সিঙ্গাপুরসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে এ চলচ্চিত্র। এটি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন COP26-এ দেখানো হয়েছে।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদ, তিতাস জিয়া, এবং তাসনোভা তামান্না। আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন অর্ণব।
সূত্র: জাগো নিউজ