শিরোনাম
হাওরে ঘেরা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা। পাশাপাশি জেলা হলেও তাদের মধ্যে নেই সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এমন বোধহয় দেশের আর কোথাও নেই। শুধু তা-ই নয়, বর্ষায় হাওর যখন প্রাণ পায়, তখন সুনামগঞ্জের এক উপজেলার সঙ্গে আরেক উপজেলাও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। সড়ক না থাকায় প্রসূতিসহ নানা রোগব্যাধিতে মেলে না জরুরি চিকিৎসাসেবা। শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হয় সড়কের অভাবে।
এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠবে। অনুমোদন পেলে নভেম্বর ২০২১ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে সুনামগঞ্জে বর্ষার সময়ও জেলার প্রতিটি উপজেলার সঙ্গে যেমন সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে, তেমনি নেত্রকোনার সঙ্গেও সুনামগঞ্জের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, হাওর অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত গ্রামীণ ডুবন্ত সড়ক, যা কেবল শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যায়। বর্ষা মৌসুমে নৌ-পরিবহনই এখানকার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। এ ধরনের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদন ও পরিবহন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সামাজিক সুবিধাদির প্রাপ্যতা, বিশেষত-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রভৃতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও দিরাই উপজেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল, নবীনগর ও নাসিরনগর উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত রাস্তাসহ ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন আগেই রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর এ সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদিত হয়। সে মোতাবেক হাওর অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ঠিক রেখে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস) এক বছরব্যাপী সমীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় (বারহাট্টা, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভপুর) যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জামালগঞ্জ উপজেলা থেকে ধর্মপাশা উপজেলা ভায়া সাচনা বাজার-সুখাইর-জয়শ্রী বাজার পর্যন্ত সড়ক এবং অন্যান্য রাস্তার সংস্থান রেখে অবশিষ্ট কাজ বাদ দিতে হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকায় ১৭০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অল সিজন সড়ক (বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা সড়ক, যা সব মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে) ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। সাবমারসিবল সড়ক (বর্ষায় তলিয়ে যাবে) ৩৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার এবং উড়াল সড়ক (যার নিচ দিয়ে পানি চলাচল করতে পারবে) ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। এছাড়া ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে হাওরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অল সিজন ও সাবমারসিবল সড়ক নির্মাণ করলে হাওরের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। হাওরের ইকো-সিস্টেম বাধাগ্রস্ত হবে। এরকম জলাশয় পৃথিবীতে বিরল। তাই পানি প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য উড়াল সড়ক করতে হবে হাওরে। ব্যয়বহুল হলেও উড়াল সড়কই হাওরের জন্য উপযুক্ত।
হাওর উন্নয়ন প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক জি এম তারিকুল ইসলাম বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক স্বচ্ছল এখন। হাওরে উড়াল সড়ক করলে সেখানে একটু খরচ বেশি হবে। তবে উড়াল সড়কে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কম।
তিনি বলেন, এখন যে সড়ক হচ্ছে, আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর পরে যখন অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হবে তখন দেখা যাবে, সেগুলো ভেঙে উড়াল সড়কের দিকে যাবে সরকার।
সূত্র: জাগো নিউজ