শিরোনাম
আজ ১৯ নভেম্বর, বিশ্ব টয়লেট দিবস। শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দিবসটি পালন করে থাকে। প্রতি বছরের মতো এবার সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। গেল প্রায় দুই যুগ ধরেই দিবসটি পালন করা হলেও দেশে এখনও শতভাগ মানুষের স্যানিটারি টয়লেট নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে পর্যাপ্ত পাবলিক শৌচাগার নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলোতেও সেবার চেয়ে বেশি ‘ব্যবসা করা’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে অতি জরুরি এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
তবে সিটি করপোরেশন বলছে, তারা নাগরিকদের জন্য পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এরই মধ্যে শতাধিক আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন আরও অর্ধশতাধিক। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত টয়লেটগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা চেম্বার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটারি ন্যাপকিন, উন্নতমানের আয়না, সিসি ক্যামেরাসহ পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী কেয়ারটেকারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে জুতা খুলে ভেতরে রাখা স্যান্ডেল পরে ব্যবহার করতে হয় এসব শৌচাগার।
স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশন তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পুরুষ এবং নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পৃথক পায়খানা ও প্রস্রাবখানা নির্মাণ এবং তা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করবে। তবে অনেক এলাকায় জায়গা না পাওয়ায় পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস রাজধানী ঢাকায়। শহরে ভয়াবহ যানজটসহ নানা কারণে নগরবাসীকে দীর্ঘসময় যানবাহন ও রাস্তাঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। বাসা থেকে বের হলেই শৌচাগারের প্রয়োজন হয় পথচারীদের। কিন্তু যেই পরিমাণ পাবলিক টয়লেট থাকা প্রয়োজন, তা নেই। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের।
বিশেষ করে নারীদের জন্য এই ভোগান্তি খুবই বিরক্তির এবং অস্বাস্থ্যকর, পুরুষদেরও ভোগান্তি কম নয়। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পর্যাপ্ত টয়লেট পাওয়া যায় না। এর মধ্যেই দেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
যদিও টয়লেটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অনেক বেশি। ভারতে যেখানে প্রায় ৭০ কোটি মানুষের টয়লেট নেই সেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব বাড়িতেই টয়লেট রয়েছে। তবে বিপত্তি হচ্ছে, মহানগরীতে অবস্থিত টয়লেটগুলো ইজারা দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াচ্ছে সিটি করপোরেশন। দিনদিন টয়লেটের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সেভাবে সেবার মান বাড়ছে না। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে টয়লেটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে নগরবাসীর।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় শতাধিক পাবলিক টয়লেট রয়েছে।
ডিএনসিসির ২০-২১ অর্থবছরে টয়লেট ও ঘাট ইজারা বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছিল ৬০ লাখ টাকা। ২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ডিএসসিসির ২০-২১ অর্থবছরে টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার ও ভাগাড় থেকে ইজারা বাবদ আয় হয়েছিল ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২১-২২ বাজেটে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দাবি স্থাটিতে ৬৩টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। আর দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে সংস্থাটিতে ২৮টি পাবলিক টয়েট রয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক নির্মিত বেশ কয়েকটি টয়লেটও রয়েছে।
জানতে চাইলে সংস্থার মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ডিএনসিসির উদ্যোগে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য ৬৩টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায় ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে খুব সহজেই গণশৌচাগারের অবস্থানসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেকোন নাগরিক প্রয়োজনের সময় তার নিকটস্থ গণশৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ মতামত কিংবা অভিযোগ অ্যাপসটির মাধ্যমেই ডিএনসিসির নিকট তুলে ধরতে পারেন।
তিনি বলেন, নাগরিকদের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ডিএনসিসি এবং বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে নির্মিত সর্বমোট ১৬৩টি গণশৌচাগার সম্পর্কিত তথ্যাদি ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শুধু পাবলিক টয়লেট নয়, নগরীর অধিকাংশ ভবনেই কার্যকর সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল নেই। ফলে টয়লেটের অপরিশোধিত পয়ঃবর্জ্য সরাসরি ড্রেন কিংবা খালে পতিত হওয়ায় জলাশয়ের পানিসহ সার্বিক পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, সুস্থ্য পরিবেশের স্বার্থেই নগরীর বাসাবাড়িগুলোতে আধুনিক সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল স্থাপন করতে হবে এবং পরিশোধন ব্যবস্থাও সচল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ডেভেলপার কোম্পানিগুলোকে ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
নগরীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোডে অবস্থিত পাবলিক টয়লেটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, টয়লেটটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালিত হলেও সেখানে আগত সেবাপ্রার্থিদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে। ফলে টাকা দেওয়ার ভয়ে সাধারণ মানুষের অনেকেই যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এরমধ্যে বেশির ভাগই নিম্ন আয় ও কর্মজীবী মানুষ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যে পরিমাণ মানুষের বসতি রয়েছে সে পরিমাণ পাবলিক টয়লেট নেই। প্রতি আধা কিলোমিটার অন্তর একটি টয়লেট থাকা আবশ্যক। সব মিলিয়ে নগরীতে ১ হাজার পাবলিক টয়লেটের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র শতাধিক! বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনকে আরও কাজ করতে হবে। পাশাপাশি ইজারাপ্রথা থেকে বের হয়ে পাবলিক টয়লেটগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালনা করা দরকার।
দেশের স্যানিটেশন কার্যক্রমকে শতভাগ সফলের দাবি নিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। ২০০১ সালে বিশ্বে টয়লেট ব্যবহার ও স্যানিটাইজেশন সম্পর্কে ক্যাম্পেইন শুরু করে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন। ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউটিও) সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন