১২ লাখ টাকা ধার দেওয়াই কাল হলো সেই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার

ফানাম নিউজ
  ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৪০

রাজধানীতে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন করেছে র‌্যাব। 

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মো. জাকির হোসেন ও তার সহযোগী মো. সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

র‌্যাব জানিয়েছে, পাওনা টাকা চাওয়ায় আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জাকির হোসেন। এর পর সাইফুলকে দিয়ে খুন করান তিনি। 
 
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র্যা বের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, হত্যার পেছনে পাওনা টাকা ও জমি আত্মসাতের উদ্দেশ্য ছিল। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জাকির হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে টাকা ধার দিয়েছিলেন নিহত আনোয়ার শহীদ। সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় কাল হয় তার। 

র‌্যাব জানায়, আনোয়ার শহীদ ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি গম গবেষণাকেন্দ্রে ১৯৭৬ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৮ সালে পরিচালক পদমর্যাদার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে সর্বশেষ কর্মস্থল জয়দেবপুর থেকে অবসর নেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, আনোয়ার শহীদ ১৯৮৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাসখানেকের মধ্যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে তিনি আর বিয়ে করেননি এবং তার কোনো সন্তান নেই। অবসর নেওয়ার আগে ও পরে তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমারে বিভিন্ন সময় দরিদ্র ও অসহায় আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করতেন।

তিনি বলেন, অবসরের পর থেকে তিনি ছোট বোন ও মামলার বাদী ফেরদৌস সুলতানার সঙ্গে তার কল্যাণপুরস্থ বাসায় থাকতেন। অবসরের পর পেনশনের টাকা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি দিনাজপুর জেলায় একটি জমি কিনে বাড়ি বানান ও ভাড়া দেন। চাকরিতে থাকতে ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেই তার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মো. জাকির হোসেনের পরিচয় হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, গত ১১ নভেম্বর নিহত আনোয়ার শহীদ পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে শ্যামলীর একটি বাস কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসার সময় শ্যামলীর হলিলেন গলিতে তিনি দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার জাকির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন— আনোয়ার শহীদ দিনাজপুরে কর্মরত থাকাবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয়, যা পরে ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। দিনাজপুরে নিহতের সঙ্গে জমি কেনার সময় জাকির দালাল হিসেবে মধ্যস্থতা করেন। এ ছাড়া নিহতের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে জাকির ১২ লাখ টাকা ধার নেন।

র‌্যাব আরও জানায়, এক বছর আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা লোন পাইয়ে দিতে আনোয়ার শহীদের সহযোগিতা চান। ভিকটিম তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা জানান এবং তার পাওনা ১২ লাখ টাকা ফেরত দিতে জাকিরকে চাপ দেন। ওই টাকা লেনদেনের ব্যাপারে নিহত আনোয়ার শহীদ ও জাকির ছাড়া কেউ জানতেন না। এর পর জাকির গত ৬-৭ মাস ধরে আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। 

সাইফুল একসময় জাকিরের চালের গোডাউন কাজ করতেন। নিয়মিত মাদকসেবন ও কিনতে তার প্রায়শই টাকার প্রয়োজন হতো। জাকিরের গোডাউনে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে জাকির সাইফুলকে অর্থ সহায়তা করতেন। ৩-৪ মাস আগে জাকির সাইফুলকে ঢাকায় আসতে বললে সাইফুল ঢাকায় আসেন। এ সময় জাকির সাইফুলকে বলেন, একজন লোক আর্থিকভাবে তাকে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি করেছে, তাকে হত্যা করতে হবে। সাইফুল যদি ওই ব্যক্তিকে হত্যা করে তা হলে জাকির সাইফুলকে জায়গাসহ বাড়ি, অর্থসহায়তা দেবে এবং আগের ধার করা টাকা পরিশোধ করতে হবে না। সেই সময়ে জাকির সাইফুলকে একটি ছুরিও কিনে দেন আনোয়ার শহীদকে হত্যার জন্য।