শিরোনাম
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় থমকে ছিল বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের ভ্রমণ। কারণ সেই করোনাভাইরাস। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ও সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল অধিকাংশ দেশে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ কিছুটা মানিয়ে নিয়েছে এ ভাইরাসের সঙ্গে। লকডাউন, টিকাকরণে জোর দেওয়ায় অনেকটা নিয়ন্ত্রণে করোনা। বাংলাদেশসহ অনেক দেশ খুলেছে পর্যটনের দুয়ার। স্বাভাবিকতার দিকে জীবনযাত্রা।
করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউন-বিধিনিষেধে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ ছিল কার্যত ঘরবন্দি। বিশেষ করে নারী-শিশুরা ছিল বেশি বিপাকে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটসহ (আইসিইউ) চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাসের পাশাপাশি করোনার প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার ফলে বর্তমানে সংক্রমণ ও মৃত্যু সহনীয় মাত্রায়। অন্য সবকিছুর সঙ্গে স্বাভাবিক হচ্ছে পর্যটনও।
দীর্ঘদিনের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন অনেকে। ভ্রমণে পুরুষরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না থাকলেও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা বিবেচনায় দেশ-বিদেশে নারীদের একা ঘুরে বেড়ানো এখনো সহজ নয়। এসব বিবেচনা করে এগিয়ে এসেছে একটি ফেসবুক গ্রুপ। এটি শুধু নারীদের। ভ্রমণপ্রিয় নারীদের অপেক্ষাকৃত কম খরচে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ- ভ্রমণকন্যা নামে ফেসবুক গ্রুপ ও প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টি।
দুজন চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় স্বল্পপরিসরে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এ গ্রুপে সংযুক্ত রয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার নারী। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে ফেসবুক গ্রুপটি। প্রতিষ্ঠানটি দেশের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে ১০৬টি পর্যটনকেন্দ্রে প্রায় তিন হাজার নারীর বিভিন্ন গ্রুপ ভ্রমণ করিয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমে আসায় প্রতিষ্ঠানটি ফের নারীদের জন্য গ্রুপে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ শুরুর পরিকল্পনা করছে।
যে দুজন সরকারি চিকিৎসকের উদ্যোগে নারী ভ্রমণকারীদের প্রায় ৬০ হাজার সদস্যের বিশাল গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তাদেরই একজন খুলনার মেয়ে সাকিয়া হক। খুলনা থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি ও ২০১১ সালে এইচএসসি পাস করে সরকারি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৬৯ ব্যাচে ভর্তি হন। মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে ইন্টার্নি শেষে ৩৯তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে (স্বাস্থ্য ক্যাডারে) সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত।
সম্প্রতি কক্সবাজার পরিদর্শনকালে ডা. সাকিয়া হক জানান, ছোটবেলা থেকেই তার দেশ-বিদেশ ভ্রমণে প্রবল আগ্রহ ছিল। কিন্তু মেয়ে হওয়ার কারণে সব জায়গায় ঘুরতে যেতে না পারার বিষয়টি তাকে পীড়া দিতো। পরিবার থেকেও নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে কোনো ট্যুরে যেতে অনুমতি দিতো না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে থেকে পড়াশোনার সময় শুধু মেয়েদের আলাদা ভ্রমণ গ্রুপ করে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা নেন।
ডা. মানসি সাহা (বর্তমানে শরীয়তপুরের ডামুড্যায় কর্মরত) নামে মেডিকেল কলেজের এক সহপাঠিনী ও তিনি মিলে ফেসবুকে গ্রুপটি খোলেন। এর আগে তারা দুজন মিলে (নারীর চোখে বাংলাদেশ) স্কুটিতে দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণ করেন।
ডা. মানসি সাহা ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ-ভ্রমণকন্যা সংগঠনের সভাপতি ও তিনি সাধারণ সম্পাদক। তাদের এ প্রতিষ্ঠানটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রেজিস্টার্ড। ২৫ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়।
ডা. সাকিয়া হক জানান, শুধু ভ্রমণ নয়, তাদের এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল, সাইকেল ও স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ, প্রজনন স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। দেশের আট বিভাগে তাদের আটজন জোন লিডার রয়েছে। তার অধীনে রয়েছে জেলা লিডার ও ভলান্টিয়ার।
নারীদের আলাদা ভ্রমণ ইভেন্টের পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছরে তারা দেশের আড়াই লাখ নারীকে জেন্ডার ইক্যুয়েলিটি অ্যান্ড উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে সচেতন করে তোলা লক্ষ্য বলে জানান এই চিকিৎসক।
সূত্র: জাগো নিউজ