১০ মিনিট পরিষ্কারে চকচক করবে ট্রেন, সাশ্রয় হবে ৭০ শতাংশ পানি

ফানাম নিউজ
  ০৭ নভেম্বর ২০২১, ২৩:৪৮

বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট’। এর মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পরিষ্কার করা যাবে একটি ট্রেন (গড়ে ১৪টি বগি)। এতে ঝকঝক করবে রেলের প্রতিটি বগি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।

ঢাকার কমলাপুর ও রাজশাহীতে পৃথক দুটি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে রেলওয়ে। সোমবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় কমলাপুরের প্ল্যান্টটির উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। একই সঙ্গে রাজশাহীর প্ল্যান্টটিও উদ্বোধন করা হবে।

তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেনের বগি পরিষ্কার শুরু হবে। অর্থাৎ যে ট্রেনটি কমলাপুর বা রাজশাহী পৌঁছাবে, যাত্রী নামানোর পর এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে ট্রেনের বগিগুলোর উভয় পাশ, ছাদ, আন্ডার গিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা হবে।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ট্রেনের প্রতিটি বগি পরিষ্কার করতে গড়ে দেড় হাজার লিটার পানি খরচ হয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিষ্কার করলে পানি লাগবে মাত্র ৬০ লিটার। এতে সাশ্রয় হবে এক হাজার ৪৪০ লিটার পানি। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ট্রেন ঠিকমতো পরিষ্কার করা সম্ভব হতো না। এতে ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা পড়তো। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে দেশে রেলওয়েতে এক হাজার ২১৭টি মিটারগেজ ও ৪৬৭টি ব্রডগেজ কোচ রয়েছে। এর সঙ্গে শিগগির আরও ৩৫০টি মিটারগেজ ও ৩০০টি ব্রডগেজ নতুন ট্রেন চালু হবে। এসব নতুন ট্রেন চালু হলে এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রেনের কোচ পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম বলেন, এটি একটি পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়-সাশ্রয়ী প্রকল্প। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করায় ট্রেনের বগিগুলো চকচকে দেখাবে। ট্রেনের ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য পরিষ্কার দেখতে পাবেন যাত্রীরা।

তিনি বলেন, নতুন স্থাপিত প্ল্যান্টের মাধ্যমে অল্প সময়ে ট্রেনের উভয় পাশ, ছাদ ও আন্ডার গিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা যাবে। এই প্ল্যান্টে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করবে। আবার ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশই রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর যাত্রীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভ্রমণের জন্য এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। প্রকল্পের আওতায় ২০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়।

সেই দুটি প্ল্যান্ট রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলস্টেশনে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে প্ল্যান্ট স্থাপনের পর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন পরিষ্কার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেন তারা। উদ্বোধনের পর যে কোনো ট্রেন কমলাপুর প্ল্যাটফর্মে ঢুকলেই সেগুলো প্ল্যান্টে নিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করা হবে।

কমলাপুর রেলস্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বরাবর উত্তর দিকের প্রায় ৫০০ মিটার এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই ওয়াশিং প্ল্যান্টের। রোববার (৭ নভেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বিভাবে স্টিলের কাঠামোর ঘরের ভেতর এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর উত্তর দিক দিয়ে ট্রেন ঢুকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বের হওয়ার জায়গা রাখা হয়েছে। ঘরের ভেতর পানির ট্যাংক-পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে শ্রমিকরা প্ল্যান্টের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গাছে রঙ করার কাজ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এই প্ল্যান্টের চারপাশ পরিষ্কারে তদারকি করছিলেন রেলওয়ের কর্মচারী তরিকুল আলম। তিনি বলেন, আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ট্রেনের ভেতর ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করা হতো। এতে বগি ঠিকমতো পরিষ্কার হতো না। বিভিন্ন অংশে কালো দাগ পড়তো। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে প্ল্যান্টে ট্রেন ঢুকলেই জানালা-দরজা লাগিয়ে ওয়াশিং পাউডার ও পানি দিয়ে অটোমেটিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়ে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে আসবে। এতে ট্রেন ঝকঝকে দেখাবে। যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্ল্যান্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আগে নিখুঁতভাবে ট্রেন পরিষ্কার করা সম্ভব হতো না। এখন প্ল্যান্ট স্থাপনের পর সেটি সম্ভব হবে। এছাড়া এখন দেশের নতুন নতুন জেলায় রেল সংযোগ যাচ্ছে। এতে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ছে। ভবিষ্যতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জেলায়ও এই প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের।

সূত্র: জাগো নিউজ