কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকাল জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা

ফানাম নিউজ
  ০৪ নভেম্বর ২০২১, ২০:৫৯

ডেমরায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকাল জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এখন চলছে হেমন্তকাল। অপরূপ এই হেমন্তের সকালে রোদ এসে পড়ছে গাছের সবুজ পাতায় পাতায়, শিশির বিন্দু ঝিকমিকিয়ে উঠছে। সূত্র: যুগান্তর

বারো মাসের তেরো পার্বণের এ দেশে চলছে কার্তিক মাস। পঞ্জিকা অনুযায়ী শীত আসতে এখনো আরও বেশ কিছু দিন বাকি। কিন্তু এদিকে প্রকৃতিতে চলছে শীতের আমেজ। হেমন্তের এ শেষ পর্যায়ে ডেমরা ও আশপাশের গ্রাম এলাকার মাঠে মাঠে সকাল দেখা যাচ্ছে শীতকালীন নানা সবজি ও ধানের আধা পাকা সবুজ শীষের দোল। কিছু কিছু জাতের আমন ধান কাটা শুরু হবে ইতোমধ্যে।

এদিকে ইতোমধ্যেই ডেমরায় শুরু হয়েছে শীতের আবহ। কুয়াশার চাদরে ঢাকা কার্তিকের এ সকাল জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বিকেল থেকে কুয়াশায় মুখ ঢাকছে মাঠঘাট। রাতভর টুপটাপ কুয়াশা ঝরছে। সকালের পরে কুয়াশা কেটে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। আশ্বিনের টানা বৃষ্টি শেষে সন্ধ্যার পর শীত পড়তে শুরু করেছে। এ বছর শীতের আগমন যেন কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ থেকেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৪ ও ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু অংশসহ ৬৬ থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা হচ্ছে ডেমরা থানাধীন। এর পাশেই রয়েছে খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানাধীন ডিএসসিসির ৭১, ৭২ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড। রাজধানীর মান্ডা-মুগদা ও নাসিরাবাদ-ত্রিমোহনী এলাকা নিয়ে ওই ৩টি ওয়ার্ড। আর এখানকার ওয়ার্ডগুলোতে এখনো প্রত্যন্ত গ্রামের আবহ বিরাজ করছে বলে এসব এলাকায় শীতের আবহ ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। এসব ওয়ার্ডগুলোতে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় ক্রমেই বাড়ছে ভাইরাসজনিত রোগ ও রোগীর সংখ্যা। তবে এসব এলাকায় সাধারণ ও শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের বসবাস কিছুটা বেশি।  

সরেজমিন দেখা গেছে, কুয়াশার চাদরে ঢাকা সকালে চারদিকে শুধুই সাদা ও নিরস প্রকৃতির হালকা অন্ধকার। দিগন্তজুড়ে যতদূর চোখ যায় সাদা সাদা জমাট বাঁধা বিন্দুর আবরণে ঢাকা রয়েছে শীত নামের এক ভয়ানক ঋতু শীত। হিম হিম অনুভব, এ যেন শীতের আহ্বান। গত কয়েকদিন ধরে প্রকৃতিতে সে আবহই বিরাজমান।

প্রকৃতির বিচিত্র উপাদান ও অনুষঙ্গের মাঝে উল্লেখযোগ্য ঋতুটিই শীত। শীতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বন্ধু ও বন্ধুর উভয় ধরনের। শীত কারো জন্য কষ্টের আবার কারোর জন্য মজার। শীতের নানা উপহার ও উপাচার মানুষকে দেয় পরম প্রশান্তি। অপরদিকে তীব্র শীত আনে দুঃসহ কষ্ট। হেমন্তের পর শীতের আগমন। আজকের আবহাওয়া জানান দিচ্ছে শীত এসে পৌঁছেছে বাঙালির দরজায় দরজায়।  বাইরে শুভ্র নীলা আকাশ, বইছে মৃদুমন্দ উত্তরের হিমেল হাওয়া। নতুন আরেকটি সময়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, ভাবতে ভালোই লাগছে।

এদিকে শীত মানেই তো এর হাঁড়িভরা মিষ্টি খেজুর রস, রসে ভেজানো মায়ের হাতে তৈরি নানা রকমের স্বাদে ভরা পিঠা, সকালের শিশিরভেজা ঘাস, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আগুন জ্বেলে আগুন পোহানো এমন আরও কত কী। এ যেন অপরূপ বাংলার চিরচেনা রূপের একটি অনুষঙ্গ। ছোটদের কাছে শীতটা একটু অন্য রকম অনুভূতির। কারণ শীত আসে ইংরেজি মাসের শেষদিকে আর তখন সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। ছোটরা তখন থাকে সকল প্রকার চাপমুক্ত। সারা বছর পড়াশোনার চাপে ছোটরা খাবারটাই ঠিকমতো খেতে পারে না, আর বিভিন্ন কারণে মায়েদেরও তেমন খাবার তৈরির ফুরসত কোথায়?

তাই শীতেই আসে মজার মজার খাবার চেখে দেখার সেই অবারিত সুযোগ। আর সে সুযোগটির উপযুক্ত সময় শীতকাল। হাঁড়িভরা মিষ্টি খেজুর রস, রসে ভেজানো নানা রকমের পিঠার প্রাচুর্য যেখানে।

সকালের শিশির ভেজা ঘাসে মুক্ত বাতাসে ছোটাছুটি সেও কি কম আনন্দের। শীতকালে সত্যি কষ্ট বেড়ে যায় ছিন্নমূল মানুষের। শীতকে রোখার মতো কাপড় চোপড়ের বড়ই অভাব তাদের। যেখানে সেখানে ইচ্ছে হলেই ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগটিও হারিয়ে যায় তাদের। শীত তাদের কাছে এসেছে অভিশপ্ত হয়ে। আর এসব দৃশ্যই এখন জানান দিচ্ছে তোমার দেশে শীত এসেছে।

এছাড়া গ্রামবাংলায় চোখ মেললেই দেখা যাচ্ছে শীতকালের ফসল গম, আলু, টমেটো, গাজর, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ, সরিষাসহ নানা রকমের রবিশস্য চাষাবাদের ব্যাপক প্রস্তুতি। ডেমরা ও আশপাশের এলাকার কৃষিনির্ভর পরিবারের কৃষকরা জমিতে গিয়ে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মৌসুমি ফসল চাষের জন্য। কুয়াশার মধ্যেই দেখা যাচ্ছে আবহমান বাংলার চিরচেনা এসব দৃশ্য।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক  বলেন, আমার ওয়ার্ডটি যেন একবারেই প্রত্যন্ত গ্রামের প্রতিচ্ছবি। খোলা জায়গা বেশি থাকার কারণে এখানে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে প্রতিদিন। এখানকার অনেক পরিবার এখনো কৃষিনির্ভর। ইতোমধ্যে শীতের আগমনী বার্তায় প্রস্তুতিও শুরু করেছেন এলাকার মানুষ। বস্তাবন্দি রাখা গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছেন। সন্ধ্যায় ও ভোরে হাঁটা-হাঁটি শেষে জমছে চায়ের আড্ডা। শীতের এ সময়টি উপভোগের সুন্দর সময় বলে মনে করেন অনেকে। তবে দিনের বেলায় ঘটছে শীতের ঠিক বিপরীত।