শিরোনাম
দিন যতই গড়াচ্ছে, নানান অপরাধসহ খুনোখুনি ততই বাড়ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। একমাস পূর্ণ না হওয়ার আগে সবচেয়ে বড় দুই হত্যাকাণ্ড নিয়ে শিবিরে বসবাসকারী সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ ব্যবসার কারণে আন্তঃদ্বন্দ্ব ও খুনোখুনি অব্যাহত রয়েছে। সূত্র: আরটিভি
শিবিরে বসবাসকারী সাধারণ রোহিঙ্গা ছাড়াও সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফের অধিবাসীদের মাঝে ভয়ভীতি বিরাজ করছে। শিবিরগুলোতে আরও বেশি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রশাসন বলছে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাপশি আরও অতিরিক্ত সদস্য বৃদ্ধি করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারে সৃষ্ট সহিংসতায় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে দেশের সীমান্ত উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি শিবির গড়ে বসবাস করছে নতুন পুরনো মিলে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তারা দিন দিন হিংস্র হতে থাকেন। মাদক পাচার, অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতি খুনসহ ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। গেলে অক্টোবর মাসে আলোচিত ও বড় দুই হত্যাকাণ্ডে সাতজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তাদের হিংস্রতা ও দলভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার ও ত্রাস প্রকাশ্যে আসে।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মো. মুহিববুল্লাহ; যিনি প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সিংহভাগ রোহিঙ্গাদের কাছে ভালো লোক বলেও পরিচিত ছিলেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া শিবিরে সংগঠনের কার্যালয়ে তাকে খুন হতে হয়েছে চিহ্নিত ও রোহিঙ্গ অস্ত্রধারীর হাতে। এ ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা ও শাস্তির দাবি করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেওয়াসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন।
সর্বশেষ ৩০ অক্টোবর ১ নম্বর শিবিরের ছব্বির আহমেদের ছেলে আবুল কালাম (৩৪) প্রকাশ আবু, সৈয়দ আনোয়ারের ছেলে মো. নাজিম উদ্দিন (৩৫) নামের দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে একটি দেশিয় আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আজিজুল হক ও ইলিয়াস আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনার থমথমে পরিস্থিতি শেষ হতে না হতেই ২৩ দিনের মাথায় রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
একটি আধিপত্য বিস্তারকারী রোহিঙ্গা দল মাদরাসাটি দখল করতে ব্যর্থ হয়ে ২২ অক্টোবর ভোর রাতে ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদরাসায়’ হামলা চালিয়ে শিক্ষক ছাত্রসহ ছয়জনকে খুন করা হয়। আহত হয়েছেন বেশকিছু সাধারণ রোহিঙ্গাও। মাদরাসার শিক্ষক ছাত্র দাবি করেন দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে ঘুমন্ত শিক্ষক-ছাত্রকে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন সদস্যরা।
রোহিঙ্গা শিবিরে কিলিং মিশনে একসঙ্গে ছয়জনকে হত্যা ও প্রায় ১০ জনকে আহত করা এটি সবচেয়ে বড় ঘটনা।
সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবি যেকোনো মুহূর্তে তারাও হামলার শিকার হতে পারেন। অনেকেই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, আবারও কোনো শিবিরে কখন রক্তপান ও খুনের ঘটনা ঘটে কি না এই চিন্তায়। শিবিরগুলোতে এক ধরনের নীরবতা নেমে এসেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাড়ানোর অনুরোধ তাদের।
শুধু তা নয়, এর আগেও রোহিঙ্গা নেতা আরিফুল্লাহসহ বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে খুন ও গুলি করে আহত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ইয়াবাসহ নানান অপরাধে জড়িত রয়েছে এসব দুষ্কৃতকারী।
এদিকে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, হোয়াইক্যং উচ্চবিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. রশিদসহ স্থানীয় প্রায় ১০ জনকে খুন করেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। তাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও নিয়মিত খুন অপহরণ নতুন নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা। নিরাপত্তার নিশ্চিতের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি স্থানীয়দের।
রোহিঙ্গা নেতা বজলুর ইসলাম দুঃখ করে জানিয়েছনে, একজন ভালো মানুষকে খুন করলো দুষ্কৃতকারীরা। মহিবুল্লাহ্ রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কাজ করে আসছিলেন। সেইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের দেখভাল করেছেন।
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গারা দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠছে। তারা মাদক পাচার, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও খুন করে পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি এ জনপ্রতিনিধির।
কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাস জানিয়েছেন, আমরা দুস্কৃতকারী রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা কঠোর অভিযান পরিচালনা করব।
১৪ আর্মড পুলিশের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক জানিয়েছেন, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আগে থেকে অভিযান চলমান রয়েছে। মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জোরদার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে নিরাপত্তারও ঘাটতি রয়েছে নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের মধ্যে নানান বিষয় নিয়ে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হচ্ছে।