শিরোনাম
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের বিস্তৃতি দেশের পাঁচটি জেলায়। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই বন বাংলাদেশের ঢাল। বুক চিতিয়ে সে ঠেকিয়ে দেয় মহাবিপদ! বঙ্গোপসাগরঘেঁষা উপকূলীয় বহু মানুষের জীবন-জীবিকা এই বন ঘিরে। একসময় জলদস্যুর হানা দিয়েছিল এসব মানুষের কাছে জমের মতো। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সেই বন এখন দস্যুমুক্ত, যা বন ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত সুন্দরবন’ ঘোষণা করেন। সোমবার (১ নভেম্বর) এর তৃতীয় বর্ষপূর্তি। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দিকনির্দেশনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও র্যাবের কর্মতৎপরতায় দস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। এই সাফল্য অর্জনে র্যাব পেয়েছে দেশবাসীর আকুণ্ঠ সমর্থন ও ভালোবাসা।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ২০১২ সাল থেকে লিড এজেন্সি হিসেবে র্যাবের জোরালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। উপর্যুপরি অভিযানে ফেরারি জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় জলদস্যুরা।
২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে সম্পূর্ণরূপে জলদস্যুমুক্ত হয় সুন্দরবন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই সাফল্যের ঘোষণা দেন। গত তিন বছর র্যাব এই সাফল্য ধরে রেখেছে।
র্যাব জানায়, আত্মসমর্পণ-পরবর্তী পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাবেক জলদস্যুদের প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান, আইনি সহায়তা ও র্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। সম্প্রতি র্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের মধ্যে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদিপশু হস্তান্তর করতে যাচ্ছে, যা তাদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সর্বমোট ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়, অস্ত্র উদ্ধার করা হয় ৪৬২টি এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয় ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড।
বর্তমানে শান্তির সুবাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ-হত্যা এখন অতীত। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। মৌয়াল, বাওয়াল, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে আসছে দর্শনার্থী-পর্যবেক্ষক, জাহাজ, বণিক। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবনকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বর্তমানে শান্তির সুবাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ-হত্যা এখন অতীত। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ।
তিনি বলেন, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি ও পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সুন্দরবনে র্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি রাখতে দুবলারচর ও মুন্সিগঞ্জে র্যাব ক্যাম্প স্থাপন এবং টহল ও আভিযানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। নিয়মিত নৌ ও পায়ে হাঁটা টহলের পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের মোটিভেশন ও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছি আমরা।
‘আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আইনি সহায়তা দিয়েছি। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ও আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে র্যাব। জলদস্যু পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করতে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন উৎসব ও করোনাকালীন সহায়তাও অব্যাহত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চলছে গণসংযোগ, জনসমর্থন ও জনসচেতনা বাড়ানো কার্যক্রম।
সুন্দরবনে র্যাবের নৌ উইং ডেভেলপমেন্ট করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, নৌ পেট্রোলিং বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা বেশকিছু যানবাহন সংগ্রহ করেছি। আমরা আরও সংগ্রহ করবো। এটা তো একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটা চলতে থাকবে। সুন্দরবন এলাকায় আমাদের পেট্রোলিং আছে। এরপর আরও বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।
সুন্দরবনের বাইরে থেকে কেউ অশান্ত করছে কি না জানতে চাইলে র্যাবপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে র্যাবের কঠোর বার্তা রয়েছে। নতুনভাবে এখনো কেউ সাহস করে উঠতে পারেনি। বার্তা এখনো জারি রয়েছে, ভবিষ্যতেও জারি থাকবে। সুন্দরবন অশান্ত করতে যেই কলকাঠি নাড়বে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: জাগো নিউজ