শিরোনাম
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সহিংসতার তদন্তে জাতিসংঘের সহায়তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। তবে এখনই যে জাতিসংঘের কোনো সহায়তা নেওয়া হচ্ছে না, তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব। পরে তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করে এ তথ্য জানান।
ঘটে যাওয়া সহিংসতা তদন্তে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সহায়তা চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আজ আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, আমাদের যে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি আছে, তাদের কাজের সহায়তার জন্য কারো যদি নির্দিষ্ট কোনো অফার থাকে তবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। জাতিসংঘের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করেছি। কেমন ধরনের সহায়তা তারা করতে পারবে সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘ নির্দিষ্টভাবে কিছু বলেনি। একটা ঢালাও প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আরও আলাপ আলোচনা করব।
তিনি বলেন, ইতালির রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, এসব ইস্যুতে তাদের অনেক বিশেষজ্ঞ আছে, তারা সহায়তা করতে পারবে। তবে আমরা চাই যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছি তাদের আমরা কাজ করতে দিই এবং তাদের কাজের প্রক্রিয়াটা শেষ হলে তারপর যদি কিছু করতে হয় তাহলে আমরা করব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই মুহূর্তে আমরা প্যারারাল বা সেপারেট অন্যকিছু করতে চাই না। আমরা আশাবাদী যে আমাদের তদন্ত কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে এবং স্বচ্ছভাবে তাদের বিচার কাজ করতে পারবে।
বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে উদ্দেশ্য সম্পর্কে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাষ্ট্রদূতদের কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে অনেক রিকোয়েস্ট পাচ্ছিলাম, সেজন্য আমরা ভাবলাম যে যারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে, জানার আগ্রহ যারা বেশি দেখাচ্ছে তাদের ডাকি। সর্বমোট ২৩ জন রাষ্ট্রদূত এবং সিডিএ এসেছিলেন। সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। সেই সঙ্গে কিছু ভিডিও যেগুলো আমাদের হাতে এসেছে এবং ইংরেজিতে কিছু ভিডিও পেয়েছি সেগুলো রাষ্ট্রদূতদের দেখিয়েছি। বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর কিছু ভিডিও রয়েছে, যেগুলো প্রমাণ করে যে র্যাব হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি করেনি। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর কিছু ভিডিও আমরা পেয়েছি, সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে বিজিবি কিছু ফাঁকা গুলি করতে বাধ্য হয়েছিল, তাও একজন মাত্র, সবাই মিলে গুলি করেনি। এই ভিডিওগুলো রাষ্ট্রদূতদের দেখিয়েছি।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আরেকটি ভিডিও ফুটেজ আছে, যেখানে পুলিশ বাহিনীর ৩০-৪০ জন ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায় এবং অনেক দূর চলে গেছে, আর যারা আন্দোলনকারী বা তাদের মধ্যে যারা দুষ্কৃতকারী তারা তখন পুলিশ সদস্যদের অনেকদূর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ছে। তখন তাদের মধ্যে একজন একটা গানশুট হলো এবং আপনারা মনে হয় দেখেছেন যে হঠাৎ করে মারা গেল সে। এই বিষয়গুলোতে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করা যায় না। যা মিস্টিরিয়াস। এগুলো আমরা রাষ্ট্রদূতদের দেখিয়েছি।
বিদেশি কূটনীতিকদের ভিডিও দেখানোর কারণ তুলে ধরে পররাষ্ট্র-সচিব বলেন, ভিডিওগুলো দেখানোর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে যে, রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন সোর্স থেকে বিভিন্ন তথ্য পাচ্ছেন এবং তাদের পাওয়া তথ্য-উপাত্তের মধ্যে গুজব আছে, যার ফলে রাষ্ট্রদূতদের যে পারসেপশন আছে সেটা একটা সঠিক দিকে নেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য ছিল।
তিনি বলেন, মোটামুটি রাষ্ট্রদূতদের আমরা এনগেজড করেছি, তাদের কিছু প্রশ্ন ছিল আমরা তার জবাব দিয়েছি। এই ধরনের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিং হয়ত আমাদের সামনে আরও করতে হবে। কারণ দেশে এবং বিদেশে নানা রকমের গুজব এবং বিভিন্ন ধরনের অপতথ্য চলছে, এসব তথ্যে আমাদের বিদেশি বন্ধুরা যাতে বিভ্রান্ত না হয় বা এসব ভুল তথ্য থেকে তারা যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় সেই প্রচেষ্টা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ ছিল।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, রাষ্ট্রদূতরা বলছেন, যে গ্রেপ্তারের সংখ্যা নিয়ে তাদের একটু সংশয় আছে, তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো বল প্রয়োগ করছে কি না বা বিভিন্ন ধরনের কথা বলার স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা এগুলো কোনোভাবে ব্যাহত হচ্ছে কি না। আমরা বলেছি, যেখানে যেতে নিষেধ করা আছে, সেখানে যদি কেউ জোর করে যেতে চায় তখন বাধা দেওয়া হচ্ছে বা কিছু গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ যে সমাবেশ হচ্ছে সেখানে কোনো গ্রেপ্তার বা বল প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এতেই প্রমাণ করে যে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে যথেষ্ট সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছেন এবং আইনের মধ্যে থেকেই আন্দোলনকারীদের বোঝাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা কখনো সক্ষম হচ্ছেন, কখনো হচ্ছেন না।
গুজব বা ভুল তথ্যের কারণে উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমরা এমন মনে করছি না। ভারত, জার্মান, জাপান, স্পেন, ইতালি এসব উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনাররা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা সবাই আশ্বাস দিয়েছেন এবং বলছেন, ‘উই আর উইথ ইউ, ইউ স্ট্যান্ড বাই বাংলাদেশ’। তারা সবাই বলেছে যে এই সময়টা কেটে যাবে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা মনে করছি না যে, কোনো সংকটের সৃষ্টি হবে। তবে ব্যবসা বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব কেমন হতে পারে সেটা বুঝতে আরও একটু সময় লাগবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখিনি।
কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত বা বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের এনগেজমেন্ট শুরু, এটা শেষ না। কারণ তাদের কাছে প্রচুর তথ্য ও ডাটা আছে। আমরা বলেছি যে আমরা প্রতিটি জিনিস নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত। আজকের ব্রিফিংটা এনগেজমেন্টের সূচনাও বলা যায়।