চামড়ার দামে লবণের বাগড়া

ফানাম নিউজ
  ২৩ জুন ২০২৪, ০৩:০৭

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ত নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় এখন চামড়া কেনা ও লবণজাতসহ চামড়া সংরক্ষণে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। সোমবার (১৭ জুন) বিকেল থেকে চামড়ার আড়তগুলোতে আসতে থাকে গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া। এরইমধ্যে কয়েক লাখ পিস চামড়া কিনেছেন বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। এছাড়া শুক্রবার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করেছে চামড়া।

তবে এবারও চামড়ার দাম নিয়ে শঙ্কায় বিক্রেতারা। আর ব্যবসায়ীদের দাবি, কাঁচা চামড়া কেনার পর সংরক্ষণের জন্য লবণ ও শ্রমিক বাবদ প্রতিপিস গরুর চামড়ার জন্য ২ থেকে তিনশ টাকা এবং খাসির চামড়া একশ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। কারণ এক বস্তা লবণের দাম আগে ছিল ৬শ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ১১শ টাকা বস্তা।

এদিকে নাটোরে এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির দানের চামড়া সংরক্ষণে জেলার মাদরাসাগুলোতে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। এছাড়া আড়তদারদের অনেকেই তাদের নিয়োজিত মৌসুমী ক্রেতাদের কাছে লবণ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার বেশি চামড়া আমদানির আশা করছেন নাটোরের চামড়া শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।

সরেজমিনে নাটোর শহরের রেলস্টেশন গেট সংলগ্ন চক বৈদ্যনাথ চামড়ার আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি আড়তেই চলছে ব্যস্ততা। ঈদের দিন থেকে আসা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তদার ও শ্রমিকরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা এবং খাসির চামাড়া প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা বেঁধে দিয়েছে সরকার। তারা ট্যানারি মালিকদের নির্দেশনা অনুযায়ী গাভীর কাঁচা চামড়া (লবণবিহীন) পাঁচ থেকে ৬শ এবং গরুর চামড়া সাত থেকে ৮শ টাকা দরে কিনেছেন। তবে কিছু বড় সাইজের গরুর চামড়া কিনেছেন ১১ থেকে ১২শ টাকা পিস দরে।

তবে ছাগলের চামড়ায় বিক্রেতারা তেমন দাম পাননি। ছাগলের চামড়ায় তারা ১০-২০ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না বলে জানালেন বিক্রেতারা। এ কারণে বেশিরভাগ চামড়া মাদরাসাগুলোতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম হিরু জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল থেকে ট্রাকে করে শুক্রবার থেকে কিছু চামড়া আসতে শুরু করেছে। ১৫-২০ দিন ধরে এই চামড়া আসা অব্যাহত থাকবে। প্রায় দুই মাস ধরে চলবে চামড়া কেনাবেচা।

তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা তাদের ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা এখনো পরিশোধ করেননি।

ব্যবসায়ী আজম আলী জানান, গত কোরবানি ঈদের চামড়ার দাম ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করলেও পূর্বের বকেয়া টাকা এখনো পরিশোধ করেননি। তারা আশা করছেন এবার নগদ টাকায় ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনবেন এবং চামড়া ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখবেন।

তিনি দাবি করেন, কাঁচা চামড়া কেনার পর সংরক্ষণের জন্য লবণ ও শ্রমিক বাবদ প্রতিপিস গরুর চামড়ার জন্য ২ থেকে তিনশ টাকা এবং খাসির চামড়া একশ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। কারণ এক বস্তা লবণের দাম আগে ছিল ৬শ টাকা। এখন কিনতে হচ্ছে ১১শ টাকা বস্তা। সে অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত দামেই আমরা চামড়া ক্রয় করছি বলতেই পারি।

তবে মৌসুমী ব্যবসায়ী শফিকুল, সিরাজুল ও রহিম জানান, তারা যে দামে চামড়া কিনেছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তাদেরও লোকসান হচ্ছে।

চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সিদ্দিকী জানান, গত বছর সরকার ওয়েট ব্লু চামড়া বিদেশে রপ্তানি করেছে। আশা করি সরকার এবছরও একই উদ্যোগ নেবে। কারণ ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে তারা চামড়ার ন্যায্য দাম কিছুটা হলেও নিশ্চিত করতে পারবেন।

চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম হিরু জানান, এ বছর নাটোরে গরু, ছাগল ও অন্যান্য জাতের চামড়াসহ প্রায় ১৬ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা করা হচ্ছে। তারা আশা করছেন ট্যানারি মালিকরা পূর্বের বকেয়া পরিশোধে উদ্যোগ নেবেন। তাহলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংকটে পড়বে না। তবে যেকোনো মূল্যে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের সুনাম ধরে রাখতে তারা প্রস্তুত।

নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, নাটোরের এই চামড়া মোকামে লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়া জেলার মাদরাসাগুলোতে দানের খাসির চামড়া সংরক্ষণে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহসহ চামড়া আনা নেওয়ার সময় যানজটমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বিসিক এই লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে।