শিরোনাম
গরমের মধ্যে প্রতিদিন একাধিক ওরালস্যালাইন পান করেন বাসাবোর মুদি দোকানি মুক্তার মিয়া। গরমে অতিরিক্ত ঘাম আর ক্লান্তি এড়াতে স্যালাইন বাড়তি শক্তি জোগাবে এমন ধারণা থেকে অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম পানি দিয়েই ঘন করে স্যালাইন গুলিয়ে খান তিনি।
তীব্র গরমের মধ্যে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানও প্রতিদিন স্যালাইন খান। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গরমে স্যালাইন পান করলে একটু ভালো লাগে। মাঝে মাঝে স্যালাইনের পাশাপাশি ঠান্ডা আখের রস, লেবুর শরবতও খাই।
গরমে মুক্তার মিয়া ও মাসুদুর রহমানের মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত স্যালাইন খাচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অকারণে অতিরিক্ত স্যালাইন, রাস্তায় বিক্রি হওয়া আখের রস কিংবা লেবুর শরবত পান মৃত্যুঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ওয়াসিম বলেন, প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে স্যালাইন কোনো সাধারণ খাবার নয়, এটা একটা ওষুধ। মন চাইলেই স্যালাইন পান করা উচিত নয়। প্রতিদিন একটি বা একদিন পর একদিন একটি করে স্যালাইন পান করা খারাপ নয়। তবে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি স্যালাইন পান করা ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত স্যালাইন পানে ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন বা ডিআইসি হতে পারে। এটা হলে রক্তনালীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে, ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্লট তৈরি হয়। প্রচুর পরিমাণে ক্লট তৈরি হতে রক্তের অধিকাংশ প্লাটিলেট এবং ক্লটিং ফ্যাক্টর ব্যবহার হয়, যার ফলে পরবর্তীতে শরীরের ক্ষুদ্র কোনো অংশ কেটে গেলে তা থেকে অবিরাম রক্তপাত হতে থাকে। আর তা কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যায় না। যা থেকে মৃত্যুঝুঁকি দেখা দেয়।
জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, একজন মানুষের প্রচুর ঘাম হলে সে একটি স্যালাইন খেতে পারে। তবে সেটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় তৈরি করতে হবে। কিন্তু কেউ যদি ঘন ঘন স্যালাইন খেতে থাকে তাহলে ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গরমে এমনিতেই উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এরপর আবার অতিরিক্ত স্যালাইন খেলে সেই উচ্চ রক্তচাপ আরও বাড়তে থাকে। ফলে মুড়ি-মুড়কির মতো স্যালাইন পানে লাভের বদলে ক্ষতিই বেশি হবে।
তিনি বলেন, দেশে অনেকে এক গ্লাস পানিতে একটি স্যালাইন গুলে পান করেন। এতে একদিকে স্যালাইন বানানোর প্রক্রিয়া যেমন সঠিক থাকে না, তেমনি অতিরিক্ত লবণ শরীরে ঢুকে ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পেয়ে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ খুব একটা ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করে চলেন না। ফলে তারা জানেনও না কেমন ঝুঁকিতে তারা রয়েছেন। তবে স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ঘরে লেবু দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ঝুঁকির মাত্রা কম থাকে।
ড. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, গরমে ফুটপাতে বিক্রি হওয়া লেবুর পানি, আখের রস ও বিভিন্ন রঙের শরবত বিক্রি হয়, এগুলো বিষের মতো। এসব পানিতে ব্যবহৃত বরফ দূষিত পানি থেকে তৈরি হয়। সরাসরি ট্যাপের পানি দিয়েই এসব শরবত বানানো হয়। ফলে রাস্তার পাশের ধুলাবালিযুক্ত এসব পানীয় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
আর ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. এজাজ বারী চৌধুরী বলেন, স্যালাইন অতিরিক্ত খাওয়া নিঃসন্দেহে ঝুঁকির কারণ। মাত্রাতিরিক্ত স্যালাইন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন একটির বেশি স্যালাইন খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি স্যালাইন প্রয়োজন মানেই আপনি অসুস্থ। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় স্যালাইন সেবন করতে পারেন।