শিরোনাম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাশের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেলো বর্তমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামকে অবসর প্রদান করা হয়েছে। সূত্র: আরটিভি
আজ বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। আদেশে আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে তাকে অবসর প্রদান করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সে হিসেবে তিনি রাজধানীর পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে থাকছেন আর মাত্র ৮ দিন।
আদেশে বলা হয়, ‘মোহা. শফিকুল ইসলামকে ২৯ অক্টোবর বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। তার অনুকূলে ১৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ল্যাম্পগ্রান্টসহ ৩০/১০/২০২১ থেকে ২৯/১০/২০২২ তারিখ পর্যন্ত এক বছরের অবসর ও অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) মঞ্জুর করা হলো।’
তিনি বিধি অনুযায়ী ও অবসরোত্তর ছুটিকালীন অন্যান্য সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়।
২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়া মোহা. শফিকুল ইসলাম বিসিএস ৮ম ব্যাচের কর্মকর্তা। ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর এএসপি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রামের রেঞ্জ ডিআইজি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এইচআরএম শাখার প্রধান ও সিআইডি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মেয়াদ বৃদ্ধির গুঞ্জনের মধ্যেই তাকে অবসর দেওয়া হলো। এ অবস্থায় কে হচ্ছেন তার স্থলাভিষিক্ত, তা নিয়ে শীর্ষ মহলে চলছে আলোচনা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এ কারণে কয়েক দিন ধরেই নতুন কমিশনার কে হতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে পুলিশ বাহিনীতে।
সূত্র জানায়, ঢাকার কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে নৌ-পুলিশের প্রধান হিসেবে কর্মরত। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে তার কমিশনার হওয়ার আলোচনা সবচেয়ে বেশি।
আতিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার জুম্মাপাড়ায়। তিনি আইপিজিএমআর (ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ) বর্তমানে বিএসএমএমইউ থেকে ফার্মাকোলজি বিষয়ে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিসিএস-১২ ব্যাচের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯১ সালে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন আতিকুল ইসলাম। বেসিক ট্রেনিং শেষে শিক্ষানবিশ এএসপি হিসেবে ময়মনসিংহ জেলায় যোগদান করেন। এরপর সহকারী পুলিশ কমিশনার ও উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ সব দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে ডিআইজি (হাইওয়ে) হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি নৌ-পুলিশের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ৬ বার আইজি ব্যাজ, ২ বার বিপিএম সার্ভিস, ২ বার পিপিএম (সেবা) (গ্যালান্ট্রি) অর্জন করেন।
আতিকুল ইসলাম ব্যক্তিজীবনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ।
ডিএমপি কমিশনার হওয়ার সম্ভাব্য তালিকায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি গোপালগঞ্জ সদর থানার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার মেজর মরহুম এস এম আব্দুল খালেকের সন্তান।
এস এম রুহুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯০ সালে ১২তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন।
২০০৩ সাল থেকে রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৩১ মার্চ তিনি রাজবাড়ী জেলার সন্ত্রাস দমন ও মাদক উদ্ধারে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন তিনি। ঝালকাঠিতে পুলিশ সুপার হিসেবে অপরাধীদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন।
তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
ডিএমপি কমিশনার হতে পারেন- এ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে শোনা যাচ্ছে পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এম খুরশীদ হোসেনের নাম।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর এ সন্তান ১২তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে (পুলিশ ক্যাডার) প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে খুরশীদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করা খুরশীদও হতে পারেন ৩৫তম ডিএমপি কমিশনার।
ঢাকার পুলিশপ্রধান হওয়ার দৌড়ে উল্লিখিত তিন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তার নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। বাড়ি গোপালগঞ্জ। কমিশনার পদে কোনো চমক থাকলে বিসিএস ১৭তম ব্যাচের জুনিয়র এ কর্মকর্তাও হতে পারেন নতুন ডিএমপি কমিশনার।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের নামও রয়েছে সম্ভাব্য কমিশনারদের তালিকায়। বিসিএস ব্যাচ বিবেচনায় পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক ও অপারেশনাল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন হাবিবুর রহমান।
১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদানের পর কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দু’বার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের এ ডিআইজি।
এছাড়াও তার একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, যা এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দায়বদ্ধতা থেকেই তার এ উদ্যোগ। এমনকী এ পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় রাজধানীর বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেকের সামাজিক অবস্থানে পরিবর্তন এসেছে।
সমাজের অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর করুণ বাস্তবতায় নিজের অবস্থান থেকে ত্রাতা হয়ে যথাসাধ্য এগিয়ে আসেন ডিআইজি হাবিবুর।