শিরোনাম
ঝিনাইদহ-৪ আসনের নিখোঁজ সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে খুন হয়েছেন। বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। এদিকে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এক ক্যাবচালক জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ আগে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে এবং তার মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
কলকাতা বিধান নগর পুলিশ জানিয়েছে, ক্যাবচালক স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, ১৩ মে তিনি যে ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলেছিলেন তাকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে লাশ ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ফ্ল্যাটে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে সেটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। সেখানে কাউকে এখনো ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে ওই ফ্ল্যাটে তিনজনকে ঢুকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজন নারী। তবে ওই তিনজনকে সেখান থেকে আর বের হতে দেখা যায়নি।
কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবা টাউনের একটি ফ্ল্যাট ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বলে নিশ্চিত করেছে কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমাদের বাংলাদেশের মানুষ জড়িত।
গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর২৪ পরগনা জেলার বরানগর থানার অন্তর্গত ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা এমপি আনোয়ারুলের দীর্ঘদিনের পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। মূলত চিকিৎসার জন্যই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ওই বন্ধুর বাড়িতে আসেন এমপি আনোয়ারুল।
পরদিন ১৩ মে দুপুরে চিকিৎসককে দেখানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু সন্ধ্যায় ফেরার কথা থাকলেও তিনি আর ফিরে আসেননি। উল্টো দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে জানান যে, তাকে আর ফোন করতে হবে না, দরকার হলে তিনি গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করবেন।
কিন্তু এরপর থেকে আর কোনোভাবেই তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই এরপর থেকেই তার পরিবারের লোকজনের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি গোপাল বিশ্বাসও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এরপরই কোনো উপায়ান্তর না দেখে গত ১৮ মে শনিবার বরানগর থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন গোপাল বিশ্বাস। অভিযোগ পেয়ে বরানগর থানার পুলিশ তদন্তে নামে।
আনোয়ারুল আজীম ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম সেই গোপাল বিশ্বাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ১৩ মে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন তিনি সেটার চালকের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়।
তিনি বলেন, পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটিকে খুঁজে বের করেছে এবং চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে, সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। এদের দুজনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন গত ১৩ মে।
ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস এর আগে বিবিসি বাংলাকে বলেন, আনোয়ারুল আজীমের সঙ্গে দুদশকেরও বেশি সময় ধরে তার পারিবারিক সম্পর্ক। তিনি বলেন, এবার তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে সেটাও জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার জানাশোনা কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে সকালে খাবার খেয়েছি। তারপর এটাও তাকে বলেছিলাম যে আমার গাড়ি সেদিন নেই, উনি যেন গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেন। এরপরে আমি বাড়ির একতলার অফিসে চলে আসি। পরে আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে বের হওয়ার সময় আমাকে বলে যান যে, তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। তার খোঁজ না পাওয়ার পর আমি যখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখি, তখন জানতে পারি যে উনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুপুর একটা ৪১ মিনিটে।
বরাহনগর থানায় যে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন গোপাল বিশ্বাস সেখানে তিনি লিখেছেন, তার বাড়ির অদূরে বিধান পার্ক এলাকা থেকে ভাড়ার গাড়িটিতে ওঠেন আনোয়ারুল আজীম। তাকে গাড়িতে উঠতে দেখেছেন এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি।
সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়িতে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেখানে ফেরেননি আনোয়ারুল আজীম। হোয়াটসঅ্যাপেই ১৩ মে তিনি ক্ষুদেবার্তা পাঠান যে, বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করবো। তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।