শিরোনাম
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে গিয়েছিলেন গত ১২ মে। কিন্তু এর পরদিন থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর থেকে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা।
কিন্তু বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতায় খুন হয়েছেন বাংলাদেশি এমপি, পাওয়া গেছে তার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ। যদিও মরদেহ পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে আনোয়ারুল আজীম যে সত্যিই খুন হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী।
যেভাবে নিখোঁজ হন
গত ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে, গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।
জিডিতে গোপাল বিশ্বাস লিখেছেন, গত ১৩ মে দুপুর দেড়টার পর ডাক্তার দেখানোর কথা বলে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। যাওয়ার সময় বলে যান, দুপুরে খাবো না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো। যাওয়ার সময় নিজে গাড়ি ডেকে বরাহনগর বিধান পার্ক কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে গাড়িতে উঠে চলে যান।
এরপর তিনি সন্ধ্যায় বরাহনগর থানার অন্তর্গত মণ্ডলপাড়া লেনে বাড়িতে না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেন, আমি বিশেষ কাজে দিল্লি যাচ্ছি। গিয়ে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।
গোপাল বিশ্বাস মিসিং ডায়েরিতে আরও লিখেছেন, গত ১৫ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, আমি দিল্লি পৌঁছালাম, আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছে, ফোন করার দরকার নেই।
এর দু'দিন পরে, ১৭ মে গোপাল বিশ্বাসকে আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে কিছুতেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। পরদিন, ১৮ মে বরাহনগর থানায় যান তিনি।
যেভাবে ছড়ালো হত্যার খবর
বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ।
কিছু মিডিয়ায় বাংলাদেশি এমপির খণ্ড-বিখণ্ড দেহ উদ্ধারের কথা বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। আনোয়ারুল আজীম যে কক্ষে ছিলেন, দিনভর সেখানে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
সঞ্জীবা গার্ডেনসের আশপাশে পুরোটাই বস্তি অঞ্চল। তার মাঝে অবস্থিত অভিজাত আবাসিক ভবনটি। সেখানেই শেষবারের মতো জীবিত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল আনোয়ারুল আজীম আনারকে।
জানা যায়, আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজ হওয়ার পর কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। তারা সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্ৰেফতারও করে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সঞ্জীবা গার্ডেনসের খোঁজ পায় পুলিশ।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ জানতে পারে, গত ১৩ মে সঞ্জীবা গার্ডেনসে উঠেছিলেন এমপি আনার। তার সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন, যার মধ্যে ছিলেন একজন নারী। এরপর থেকে আনোয়ারুল আজীম আনার ভবনের বাইরে না বেরোলেও বাকিরা বেশ কয়েকবার বের হন।
যা বললেন বাংলাদেশের মন্ত্রীরা
বুধবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন, ভারতে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষই জড়িত। এর মধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
একইদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, এমপি আনোয়ার সাহেবের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। কলকাতা পুলিশ যে ফ্ল্যাটে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে, সেখানে মরদেহ খুঁজে পায়নি। তবে হত্যাকাণ্ডের পর কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ডিবি আটক করেছে, কলকাতা পুলিশও দুজনকে আটক করেছে। কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
আওয়ামী লীগের তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কী বলছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ
বুধবার বিকেলে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনস থেকে বেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের আইজি সিআইডি অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, গত ২০ মে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই কেসটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার একটি নির্দেশ আসে। এরপর আজ ২২ তারিখে আমাদের কাছে একটি তথ্য আসে যে, তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। এরপরে আমাদের পুলিশ এই ফ্ল্যাটটিকে শনাক্তকরণ করে। কারণ এখানেই তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে আরও তদন্ত চলছে। সিআইডি এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজি সিআইডি জানান, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়নি। আমরা কেসের তদন্ত শুরু করেছি। আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তাতে ১৩ তারিখে তিনি এই ভবনে ঢুকেছিলেন। তবে এর আগে এসেছিলেন কি না সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। যদিও বিষয়টি এখনো তদন্তসাপেক্ষ।
মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে বলে যে খবর ছড়িয়েছে সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফটোগ্রাফি সব টিমকে এই তদন্তে ইনভাইট করা হয়েছে। তারা খতিয়ে দেখছেন।
অখিলেশ চতুর্বেদী আরও জানান, যে ফ্ল্যাটটিতে ওই সংসদ সদস্য এসে উঠেছিলেন, সেটি সন্দীপ রায় নামে এক ব্যক্তির। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দপ্তরে কাজ করেন। তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা (প্রবাসী বাংলাদেশি) আখতারুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে।