শিরোনাম
দেশে চলমান অর্থনৈতিক চাপের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়াচ্ছে না সরকার। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা বেশি।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এ উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এক হাজার ১৩৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১০টি মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিতে।
সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উনয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্প, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্প এবং পদ্মা রেল ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এই গুচ্ছ কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭১ হাজার ৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ছয় হাজার পাঁচ কোটি টাকা। এরপরে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে তিন হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। ‘ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট : মেট্রো রেল লাইন-১’ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ তিন হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
এছাড়া পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ তিন হাজার ৫৪৪ কোটি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৫৩৫ কোটি, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া শীর্ষক প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৩৮৪ কোটি এবং পাঁচটি হাসপাতাল ৫০০ শয্যা উন্নীতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা।
এদিকে প্রস্তাবিত এডিপি অনুযায়ী ৫৮টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৩৭১ কোটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৯ হাজার ২২৭ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৯০৩ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য চার হাজার ৫৮৮ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য চার হাজার ৪২৫ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য দুই হাজার ৯২৭ কোটি এবং সেতু বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা।