শিরোনাম
কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতার লক্ষ্যে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার মজুত করা বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫ কক্সবাজার। এসময় সংগঠনের শীর্ষ দুই কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) ভোরের দিকে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২০ লাগোয়া লাল পাহাড় এলাকায় আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার ও এসব গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতার আরসা কমান্ডাররা হলেন উখিয়ার ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দুল আকবরের ছেলে শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম (৩৮) ও ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ এর মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে রিয়াজ (২৭)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ জানতে পারে, মাস্টার সেলিম বর্তমানে ক্যাম্প এলাকায় আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা চলছিল। আজ ভোরের দিকে লাল পাহাড় এলাকায় আরসার আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিমসহ দুজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
এসময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি গ্রেনেড, তিনটি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, একটি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড নাইনএমএম পিস্তলের অ্যামুনিশন, একটি এলজি ও তিনটি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাব জানায়, শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৫-তে বসবাস শুরু করে। মিয়ানমার থাকাকালীন সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এসময় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবেও দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগ দেন।
আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার, কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন শাহনুর প্রকাশ। অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকের ওপর পারদর্শী হওয়ায় তাকে ক্যাম্প-১৫ এর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে আরসার নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মিয়ানমারে চলমানের সংঘাতের কারণে লুট করা অস্ত্র-গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করছিলেন। ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় মারামারি, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। শাহনুরের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
রিয়াজও ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ ও বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালে মৌলভী ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগ দেন এবং প্রাথমিকভাবে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আরসা বিরোধী সংগঠনের সদস্যদের গতিবিধি লক্ষ্য করতো। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমার ফিরে গিয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। সম্প্রতি আবার বাংলাদেশে ঢুকে মাস্টার সলিমের অন্যতম সহযোগী হয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নিতেন। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
র্যাব কর্মকর্তা আরাফাত ইসলাম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উখিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। উদ্ধার অস্ত্র, গোলাবারুদ সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিট নিষ্ক্রিয় করেছে।