শিরোনাম
সোমালি জলদস্যুদের সঙ্গে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মালিক পক্ষের সমঝোতার আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফলে যেকোনো সময় মুক্তি পেতে পারেন জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিক। তবে মুক্তির সুনির্দিষ্ট সময় স্পষ্ট করছেন না জাহাজের মালিক পক্ষ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও ‘আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে’ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে স্বজনদের সঙ্গে জিম্মি নাবিকরা ফোনে কথা বলেছেন। তারা ভালো ও সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন। কবির গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও নাবিকরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সূত্র জানায়, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতা চলছে মালিক পক্ষের। গত ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো যোগাযোগ করে জলদস্যুরা। সেই থেকে আলোচনা চলছে এবং তা এখনও অব্যাহত।
কেএসআরএম সূত্র জানায়, মুক্তিপণ ছাড়া নাবিক ও জাহাজ মুক্ত করার কোনো পথ নেই। মালিক পক্ষ কবির গ্রুপেরও ধারণা তাই। সেজন্য তাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। মুক্তিপণের ব্যাপারে আলোচনা চললেও অর্থের পরিমাণ কত- তা কেউ বলতে রাজি নয়।
কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। খাবারের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ আলোচনা চলছে। আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, ঈদের আগেই যেন জিম্মি নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারি। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
কেএসআরএম সূত্র আরও জানিয়েছে, জলদস্যুদের কবল থেকে নাবিকদের মুক্ত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে কবির গ্রুপ। জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর ২৩ নাবিককে আকাশপথে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। কয়লাভর্তি জাহাজটিকে সোমালিয়া থেকে দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য ২৩ জন নাবিকের নতুন টিমও প্রস্তুত করে রেখেছেন জাহাজ মালিক।
জাহাজে জিম্মি ওয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম জানান, শামসুদ্দিন তাদের ফোন করেছিলেন। তারা সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে এসব কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করে জাহাজটি। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এমভি জাহান মণি। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। পরে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে এমভি আবদুল্লাহ সর্বশেষ সংযোজন। ২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার; ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়। নতুন নাম দেয়া হয় এমভি আবদুল্লাহ।
এদিকে জলদস্যুদের কবল থেকে জিম্মি ২৩ নাবিককে উদ্ধার ও জাহাজটি ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মধ্যে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা। একইসঙ্গে জিম্মি জাহাজটি উদ্ধার করাও আমাদের উদ্দেশ্য। শুধু এতটুকু বলতে চাই, আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাবারের সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে যখন জাহাজ অপহরণ হয়েছে, কখনও খাবারের সংকট হয়নি। তিন বছর ছিল, তখনও হয়নি; ১০০ দিন ছিল, তখনও হয়নি। আশা করি, এক্ষেত্রেও হবে না।’