শিরোনাম
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের যে পুরস্কার নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিতর্ক চলছে, সেই ‘ট্রি অব পিস’ অফিসিয়াল পুরস্কার নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর।
ইউনূসকে কথিত এই পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে বিতর্কের মধ্যে শুক্রবার ইউনেস্কোর এমন বক্তব্য এলো।
ইউনূসের ‘ট্রিপ অব পিস’ পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর এ বিষয়ে জানতে সংস্থাটির সদরদপ্তরে ইমেইল করা হয়েছিল।
তার জবাবে ইউনেস্কোর একজন মুখপাত্র বলেন, “শিল্পী হেদভা সের শিল্পকর্ম হিসেবে ‘ট্রি অব পিস’ নির্মাণ করেছেন।
“যদিও হেদভা সের ইউনেস্কোর একজন শুভেচ্ছা দূত, কিন্তু তার এই শিল্পকর্ম অফিসিয়াল ইউনেস্কো পুরস্কার নয়।”
গত ২১ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “একাদশ গ্লোবাল বাকু সম্মেলনের শেষ দিনে প্রফেসর ইউনূসকে ইউনেস্কোর ‘দ্য ট্রি অব পিস’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানের সমাপনী নৈশভোজে তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।”
এর এক সপ্তাহ পর গত বুধবার বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের শুরু।
বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ‘অন্য একটি পুরস্কারকে ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী ওইদিন বলেন, “ডক্টর ইউনূস ইউনেস্কোর নাম নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন, যেটি অনৈতিক এবং অপরাধমূলক। এটি আমাদের দেশের জন্য মানহানিকর যে, একজন ইসরাইলি ভাস্করের পুরস্কারকে তিনি ইউনেস্কো পুরস্কার হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।”
“ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো পুরস্কার দিয়েছে বলে একটি প্রচারণা রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ইউনেস্কোর মূল সদর দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে তারা আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন যে, ইউনেস্কো ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই নামে এই ধরনের কোনো সম্মাননা দেননি।”
মহিবুল হাসান চৌধুর আরও বলেন, “জনাব ডক্টর মো. ইউনূস আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে একটি সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। গজনভী ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার নামের একটি সংস্থার আমন্ত্রণে ইসরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদমা সের ‘ট্রি অফ পিস’ নামক একটি সম্মাননা স্মারক দিয়েছেন। হেদমা সের নিশ্চিত করেছেন যে, এটি ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা নয়। গজনভী সেন্টারের আমন্ত্রণে তিনি সেটা ইউনূসকে দিয়েছেন।”
এরপর বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ওই সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল, কিন্তু কোনোভাবেই এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। ইউনূস সেন্টার যেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে মিথ্যা ও অপপ্রচার করেছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস সেন্টার বলেছে, ইউনেস্কো প্রদত্ত পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি অধ্যাপক ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামে মেইলে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং তাদের অফিসিয়াল প্রোগ্রামেও ওই পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ আছে।
ওই ইমেইলের কপি, অনুষ্ঠানের সূচি এবং ‘ট্রি অব পিস পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানের ভিডিও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে পাঠিয়েছে ইউনূস সেন্টার।
ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত হেদভা সেরের শিল্পকর্ম ‘ট্রি অব পিস’। ২০১২ সাল থেকে এটি ‘অফিসিয়াল ইউনেস্কো ট্রফি’ হিসেবে ব্যবহার হওয়ার কথা ইউনেস্কোর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
ইউনেস্কোর মহাপরিচালকরা বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এটি উপহার হিসেবে দিয়ে আসছেন।
মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ হেদভা সেরের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটে দেখা যায়, শিল্পী হেদভা সেরও ‘ট্রি অব পিস’ ভাস্কর্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে স্থাপন করে আসছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে এই ভাস্কর্য উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন তিনি।
বাকু সম্মেলনের নৈশভোজে অধ্যাপক ইউনূসের হাতে তিনি নিজেই ভাস্কর্যটি তুলে দেন। সেখানে শান্তিতে আরেক নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থীকেও অন্য একটি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
বাকু ফোরামের একটি সেশনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম সেশনের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিসের হাতে ‘ট্রি অব পিস’ তুলে দেওয়ার ছবিও এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন হেদভা সের।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ‘ট্রি অব পিস’ তুলে দিয়েছিলেন ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা।
সে বিষয়ে ইউনেস্কো মুখপাত্র বলেন, “ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার হিসাবে এই ভাস্কর্য তুলে দিয়েছিলেন।”