শিরোনাম
সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ছাড়া দেশের জন্য ভালো নীতি গড়ে তোলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া একটি দেশ উন্নয়ন করতে পারে না। নীতিতে জনগণের দাবিকে প্রতিফলিত করতে হবে। নিজেকে দেশের জন্য প্রস্তুত করার সেই সময়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভেতর ও বাহির জানার বিষয়ে আরও আগ্রহী ছিলাম। দেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরেছি।
জনগণের কষ্টগুলো সরাসরি গিয়ে দেখেছি। এটি আমাকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি। আগামী ৫০ বছরে দেশের প্রধান নীতিনির্ধারণী ও আদর্শিক চ্যালেঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, চরমপন্থি, কট্টরপন্থি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া, যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট আদর্শ নেই, তারা ক্ষমতায় এলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। এটি আমাকে মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন করে।
আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ‘হোয়াইট বোর্ড’ ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংখ্যায় এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইংরেজিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছে সিআরআই।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে নীতিকে যুক্ত করা এবং জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্বের ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকের শেষের দিকের সামরিক স্বৈরশাসকরা। এটি আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে ভোট প্রদানের জন্য আমার প্রচেষ্টাকে উৎসর্গ করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছিল আমাদের অন্যতম বড় অর্জন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম দিকের নীতিগত অগ্রাধিকারগুলোর একটি কী ছিল, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু অর্জন করতে হলে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে নীতিগত অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি ছিল গৃহহীনতা নির্মূল করা। আমার প্রশাসন জনসাধারণকে সরকারি তহবিল থেকে বাড়ি দেওয়ার একটি সহজ নীতির মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলা করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের উদাহরণ টেনে তার জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, জনগণের একজন সত্যিকারের প্রতিনিধির একটি দেশের উন্নয়নের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, যা একজন অভিজাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী করতে অক্ষম। উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা। উন্নয়নকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা যাবে না।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমাদের দেশের শাসন চলবে শুধু আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।’ অর্থাৎ, বাংলাদেশ অন্য দেশের উন্নয়ন ফর্মুলা আমদানি করতে পারে না। সে কথার উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের জন্য বিদেশি পরামর্শ এখানে কখনই কাজ করে না। এর মানে এই নয় যে, আমরা সারা বিশ্বের উন্নয়নে চোখ বন্ধ করে রাখি। বিভিন্ন দেশের ভালো চর্চাগুলো আমাদের প্রয়োজনের জন্য শিখতে হবে। আশির দশকে যখন প্রায়ই যুক্তরাজ্যে যেতাম, তখন লক্ষ্য করি তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিটি পাড়ায় পৌঁছেছে। তাই, আমি কমিউনিটি ক্লিনিক নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের জন্য তাদের সিস্টেমগুলো গ্রহণ করেছি।
বিদেশিনির্ভরতা হ্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার প্রশাসনের একটি প্রচেষ্টার কারণেই এটি হয়েছে। এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে আমাদের প্রথমে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আপনার নিজেকে সমান হিসেবে দেখা শুরু করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অর্থ এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। যখন অন্যান্য সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেট প্রণয়ন করত, তখন সিংহভাগই বিদেশি অর্থায়ন থেকে আসত। তাদের আর্থিক নীতি ছিল মূলত ‘দাতা-নির্ভর’। সর্বোপরি, জনসাধারণের ব্যয়ের ক্ষমতা ছিল নগণ্য। আমি বিদেশি ধার করা অর্থ প্রত্যাখ্যান করে এই নীতি উল্টে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, নীতি প্রণয়ন চিরকাল বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। বাংলাদেশের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। এটা আমার সহজ কথা, আমাদের দেশ, আমাদের নীতি। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞাকে নিজের মেয়াদে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের বড় উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ভবিষ্যতের নীতি-নির্ধারকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বোঝা উচিত কৌশলগত নীতি নির্ধারণের ফলে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এর অগ্রগতি কোন অলৌকিক ঘটনা নয়। নীতি গবেষণা দ্বারা তৈরি একটি সূত্র রয়েছে যা স্থানীয় জ্ঞান, নমনীয়তা, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে একত্রিত করে। ভবিষ্যৎ নীতি-নির্ধারকরা যদি সূত্রটি বোঝেন এবং নতুন বাস্তবতার জন্য পরিকল্পনাগুলোকে নতুন করে সাজান তাহলে তারা বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারবেন। আমি তাদের কঠোর না হওয়ার পরামর্শ দেব।