শিরোনাম
ভবন নির্মাণে বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন ও তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের সমন্বয়ে একটি সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
রোববার (১০ মার্চ) সচিবালয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
রাজধানীর বেইলি রোডের পুড়ে যাওয়া ভবনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটার কথা বলা হয়েছে, এটা রেস্টুরেন্টের জন্য তৈরি করা হয়নি। কিন্তু এটা (রেস্টুরেন্ট) কে করলো, নিশ্চয়ই কারও গাফিলতি আছে। গাফিলতি যার আছে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা শিগগির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে কীভাবে ভবিষ্যতে একটি প্রোগ্রাম নেওয়া যায়, এ ধরনের অনিয়ম যারা করে তাদের বিষয়ে একটি সংস্থাকে পুরোপুরি দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটা ব্যবস্থা নেবো। সেজন্য খুব শিগগির আমরা একটা মিটিং করবো।
তিনি বলেন, আমরা একটা অথরিটি চাচ্ছি। হয় ফায়ার সার্ভিস, না হয় রাজউক, না হয় পুলিশের কেউ একজন অথরিটি থাকবে। এ অথরিটি পুরো দায়িত্ব নেবে। সবাই মিলে একটা অথরিটি হবে, সেখানে ফায়ার সার্ভিস থাকবে, মেয়র সাহেবের প্রতিনিধি থাকবে। সবাইকে নিয়ে একটা অথরিটি করার চিন্তা করছি। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর অভিযানের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। কর্মচারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, মালিকরা গ্রেফতার হচ্ছেন না- এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, রাস্তার পাশের বাড়িগুলোতে রেস্টুরেন্টের অনুমোদন ছিল না। বাড়িটা (বেইলি রোডে) অফিসের জন্য বানানো হয়েছে, তারপরও সেখানে রেস্টুরেন্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি ওঠানামার অনুপযুক্ত করে ফেলেছিল। এক্সিডেন্ট তো একবারই হয়, একদিনই হয়। রোজ রোজ তো এক্সিডেন্ট হয় না।
‘ঘটনা অকস্মাৎ এ রকমভাবে হয়েছে। মোট ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আরও কয়েকজন এখনো মুমূর্ষ অবস্থায় আছেন। সবারই প্রশ্ন- এর দায়-দায়িত্ব কার? কেউ কি দেখাশোনার মালিক নেই বাংলাদেশে? প্রশ্নটা আপনাদের যেমন আছে, সবারই আছে। যার যার দায়িত্বটা পরীক্ষা করার জন্যই এগুলো (অভিযান) করা হচ্ছে’- বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারিভাবে আমরা একটি টিম করে দিয়েছি। কেন অগ্নিকাণ্ড হলো, ঘটনা কী, সেটার অনুসন্ধান হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা তো হবেই।
তিনি বলেন, রাজউকের কোথায় তদারকির অভাব ছিল, সেটা রাজউক দেখছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সবাই এখন দেখছেন। অভিযানগুলোতে পুলিশকে অনুরোধ করছে, তাই পুলিশ যাচ্ছে। পুলিশ স্ব-প্রণোদিত হয়ে কোনো জায়গায় গিয়েছে বলে আমরা জানা নেই। নজরে গাফিলতি পড়লে অন্য ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে পুলিশও গিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দেওয়া বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন দিতে হয়। এ অনুমোদন ছাড়া ভবন ব্যবহারের উপযোগী ঘোষণা দেওয়া যাবে না বলে আইনে আছে। কিন্তু কেউ তা তোয়াক্কা করছে না। সেই জায়গাটিতেই তো প্রশ্ন আসছে।
বেইলি রোডের ঘটনার পর পরই ভবন মালিক নাকি পালিয়ে গেছেন শোনা যাচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো তো তদন্ত হচ্ছে। যার গাফিলতি আছে, আইনের মুখোমুখি হতে হবে। বিদেশে গেলে কি আমরা বিদেশ থেকে আনতে পারবো না? আমরা আনবো, যখন আসবে তখন তার বিচার হবে।
বাজার তদারকির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর অপচেষ্টা করে তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয়টি আমরা দেখবো।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের আট তলা একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়। বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে অনুমোদন নিলেও ভবনটিতে রেস্তোরাঁ ব্যবসার অনুমতি ছিল না। অথচ ভবনটিতে ছিল ১৪টি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান। এছাড়া ওই ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। ভবনের একমাত্র সিঁড়িটিও ছিল ব্যবহার অনুপযোগী।
ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নামিদামি অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় চরম অনিয়মের চিত্র।