শিরোনাম
দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি এটি বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে জার্মান সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সকাল সাড়ে ১০টার পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। যথারীতি লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রধানমন্ত্রী। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরুপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় এ সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নতি যাতে টেকসই হয়, সেটা লক্ষ্য রেখেই আমাদের কার্যক্রম। আমরা একটা পর্যাায়ে উঠে এসেছি, সেটা যাতে টেকসই হয়, সেটাই মূল লক্ষ্য।
যানজট নিয়ে তিনি বলেন, মেট্রোরেল এবং এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা কমেছে। অনেক জায়গায় রয়ে গেছে। আরও ৫টা মেট্রোরেল হলে এবং এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে যানজট হয়তো আর থাকবে না। কিছু কথা বলা আমাদের বাঙালির স্বভাব। কিছুই ভালো লাগে না তাদের। আলোচনা দেখেছি, ৩০ হাজার কোটি টাকা কেনো লাগবে, তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে যানজট কমানো যাবে। পরে তাদের জিগ্যেস করলাম, কী ব্যাপার? বলে আপা আমি কিন্তু কিছু বলিনি।
যানজট কমাতে শহরে ট্রাফিক লাইট লাগাতে বলে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যানজট নিয়ে আজকে প্রশ্ন এসছে, আমি কিন্তু গতকালেই ট্রাফিক লাইট লাগাতে বলে দিয়েছি। যাতে করে ট্রাফিক জ্যাম কম থাকে।
প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, আমি যেটা বলেছি, সেটা তো স্পষ্ট। আমরা যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে। আমাদের এখানেও তো হয়েছে। গাজায় যা হচ্ছে, সেটা তো অমানবিক। হাসপাতালেও হামলা হচ্ছে। এটা তো মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিশ্বনেতারা দুমুখো নীতি অবলম্বন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ইস্যুতে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। ক্ষমতায় থাকতে পারবো কি না, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমার টার্গেট ছিল- ২০২১, দেশটাকে একটা ধাপ উপরে উঠাবো, সেটা করে ফেলেছি।
তিনি বলেন, যুদ্ধ তো সুনির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাবে সারাবিশ্বে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। যন্ত্রণায় যুদ্ধের সম্মুখীন দেশ বেশি ভুগছে। কিন্তু এটার প্রভাব সারাবিশ্বে পড়ছে। আমাদের মতো বিভিন্ন দেশের মানুষও কষ্ট পাচ্ছে। আমরা রোহিঙ্গাদের জায়গা দিয়েছি, আমরা তো মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে যাইনি। মাথাঠাণ্ডা রেখে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করছি, এটার সুফলও পাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যের পর প্রথমে প্রশ্ন করেন সাংবাদিক মনজুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনাকে। পাশাপাশি ১১জন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সংসদ সদস্য মনোনয়ন দেওয়ায় ধন্যবাদ জানান। এসময় হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দিছি কেনো জানেন না? সাংবাদিকরা যাতে আমাদের সমালোচনা না করতে পারে, সেজন্য।’
পরে উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু সংসদ সদস্য করার সুযোগ পেয়েছি। সব শ্রেণীপেশার মানুষকে আনার চেষ্টা করেছি। সংসদে কী হয়, সেগুলো সবার জানা ও দেখা দরকার।’
দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র ছিল। ষড়যন্ত্র তো আছেই। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বার বার করেছে। নির্বাচন যাতে না হয়, বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা আপনারা জানেন। এগুলো হঠাৎ করে নয়, পরিকল্পিতভাবে করেছে। নির্বাচন যখন বানচাল করতে পারবে না, বুঝে গেছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। তাই তারা পরিকল্পনা করেছে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে আর তারা আন্দোলন করবে।’
তিনি বলেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর কথা তো আপনিই বললেন। আপনার কি মনে হয় না, যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করে তাদেরও এখানে কারসাজি আছে? এর আগে দেখলাম পেঁয়াজের খুব অভাব। পরে দেখা গেলো বস্তাকে বস্তা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কী করা উচিত, সেটা আপনারাই বলেন। এদের তো গণধোলাই দেওয়া উচিত। কারণ আমরা সরকার কিছু করলে বলবে, সরকার করেছে। পাবলিক যদি প্রতিকার করে, তাহলে সব থেকে ভালো, কেউ কিছু বলবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পঁচিয়ে ফেলে দেবে, আর দাম বাড়াবে!
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মত সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে ‘মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন’-এ যোগদান উপলক্ষে সম্প্রতি জার্মানি সফরের নানা অভিজ্ঞতা জানান।
এর আগে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জার্মানিতে তিনদিনের সরকারি সফর শেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে যোগ দিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ছাড়েন তিনি। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের সভাপতির আমন্ত্রণে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর দেশের বাইরে এটিই ছিল তার প্রথম সরকারি সফর।
জার্মানিতে অবস্থানকালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন। এছাড়াও এ সফরে জার্মানিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।