শিরোনাম
ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা কার্যকরি মূলধনের চাহিদা ২০-৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ পরস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। ফলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। ওয়ার্কি ক্যাপিটাল বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ীদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে হবে। আর এ অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চললে শ্রমিক কমাতে হবে। এমন অভিমত দিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত সিএমজেএফ টকে অংশ নিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি এ অভিমত দেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনের আল-রাজী কমপ্লেক্স সিএমজেএফের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি করতে চাইলে এখনকার থেকে আড়াইগুণ বড় করতে হবে। ৬ বছরে আড়াইগুণ, আপনি যদি হিসাব করেন দেখবেন সাংঘাতিক বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জটা যদি আমরা উৎরাতে চাই তাহলে, যে গ্রোথ রেট দরকার, সেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি। আপনি যদি হঠাৎ করে গ্রোথ রেট ৬ শতাংশ থেকে ৯ বা ১০ শতাংশে নিতে চান আপনাকে অনেক কিছু করতে হবে।
তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে আমাদের অর্থনীতি অনেকগুলো অভ্যন্তরীণ মেজর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। শুধু আমরাই যে মুখোমুখ তা কিন্তু না। আপনি যদি দেখেন মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারটা দুনীয়জুড়েই সবাইকে হিট করেছে। আমাদেরও করেছে।
তিনি আরও বলেন, জাপানি ইয়েন বা ভারতীয় রূপি টাকার অংকে খুব একটা বাড়েনি। এর কারণ হলো অন্যান্য দেশেও কারেন্সি রিভ্যালুয়েশন করতে বাধ্য হয়েছে। কারেন্সি রিভ্যালুয়েশনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বড় সমস্যা আমরা আমদানি করতে পারছি না। ব্যাংকগুলোর কাছে যথেষ্ট ডলার লিকুইডিটি নেই। এটা গত এক বছর ধরে আমাদের ভোগাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের জন্য সমস্যা একটা দাঁড়িয়ে গেছে, আগামী বছরের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ। সহজে যদি বিষয়টি বলি গত বছর আমাদের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল রিকয়ারমেন্ট যেটা ছিল, ডলারের দাম বাড়ার কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের রিকয়ারমেন্ট বেড়ে যায়। ওয়ার্কি ক্যাপিটাল রিকয়ামেন্ট বেড়ে যাওয়ার পরিমাণ ২০-৪০ শতাংশ। এই অবস্থায় যদি ক্রেডিট গ্রোথ মাত্র ১০ শতাংশ হয়, তখন আমাদের জন্য খুব ডিফিকাল্ট সিচুয়েশন হয়ে যায়।
এর কারণ হিসেবে ঢাকার ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, ব্যবসা করার জন্য যখন আমি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলছি, আমি দেখছি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল যদি বাড়াতে না পরি তাহেল প্রডাক্টশন (উৎপাদন) কমিয়ে দেওয়া ছাড়া, সার্ভাইভের অন্য রাস্তা নেই। আমি যদি লোন নিতে না পারি তাহলে আর কী করবো? প্রডাক্টশন কমিয়ে দিতে হবে। এটা (প্রডাক্টশন কমিয়ে দেয়া) যদি লম্বা সময় ধরে চলে, তখন শ্রমিক কমানো কিংবা খরচ কমানো ছাড়া কোনো রাস্তা নেই।
বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি লোন নেওয়া খুব ডিফিকাল্ট। এটা পুঁজিবাজারে নেই। আপনি বন্ড ইস্যু করে ৫ বছর ১০ বছরের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। আপনি যখন খুশি তা বিক্রি করে দিতে পারেন। পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করাটা একটু সময়সাপেক্ষ। এটা ইমিডিয়েট কাজ করবে না। দীর্ঘমেয়াদে এটা নিয়ে কাজ করা যাবে। অডিট রিপোর্টের একটা বাধ্যবাধকতা আছে।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের বাইরে অর্থপাচার বা মানি লন্ডারিং শুধু অর্থনৈতিক কারণে হয় না। অর্থের ধর্ম হলো রিটার্ন যেখানে বেশি, সে দিকেই যাবে। দেশের বাইরে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়, এমন নয়। বরং দেশে বিনিয়োগ করলেই তার চেয়ে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। সুতরাং মানি লন্ডারিং অর্থনৈতিক কারণে হয় না। অন্য কারণও থাকতে পারে।
আশরাফ আহমেদ বলেন, মানি লন্ডারিং বা অন্য কোনো অনিয়মে যেসব ব্যবসায়ী জড়িত দায় শুধু তারই। তাই কোনো একজন ব্যবসায়ীর দায় সব ব্যবসায়ীর ওপর বর্তায় না।
এসময় পুরান ঢাকার যানজটের সমস্যার কথা তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আপনি যদি চকবাজার বা এ জায়গাগুলোতে দেখেন তাদের যে রিটেল ব্যবসা, হোলসেল ব্যবসা মার খাচ্ছে। কারণ কাস্টমারা যেতে পারছে না। আমাকে কেউ যদি বলেন পুরান ঢাকায় যেতে হবে কিছু কেনাকাটা করার জন্য, দেখা যাবে সারাদিন চলে যাবে যাওয়া-আসা করার জন্য। যানজট সমস্যার সমাধান যদি করা না যায়, তখন কি হয় ওই পুরো এলাকার ইকোনমি ফান্ডামেন্টাল বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য এটা (যানজট) নিরসন করা জরুরি।
তিনি বলেন, এর বাইরে (যানজট) আরও কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন ট্রেডলাইসেন্স, বিভিন্ন ধরনের গভর্মেন্ট লাইসেন্স অনেক ক্ষেত্রেই এগুলো সহজ করার সুযোগ আছে। এ সুযোগকে বাস্তবায়ন করতে গেলে আইনের পরিবর্তন করতে হবে। সরকারের কাছ থেকে ব্যবসার লাইসেন্স নিতে ৪-৫টা জায়গায় যেতে হয়। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সবগুলোই কাভার করা যায়, কিন্তু ওখানে ছোটখাটো কিছু রেগুলেটরি ব্যাধা আছে যেগুলো দূর করতে হবে।