শিরোনাম
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব ছড়িয়ে দিতে অনুবাদের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার সরকারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। তাই ভাষা সাহিত্যসহ সবকিছু স্মার্ট করতে হবে। প্রকাশনায় ডিজিটাল ও অডিও মাধ্যম সংযোজন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনুসরণ করে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বাবার পথ অনুসরণ করে এ পর্যন্ত যত ভাষণ দিয়েছি। অন্তত ১৯-২০ বার হবে। আমি কিন্তু বাংলা ভাষায় বক্তব্য দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তারা রক্তের অক্ষরে বলে গেছে মায়ের ভাষাতে কথা বলতে চাই। সেই সালাম রফিক, বরকত, জব্বারসহ যারা একুশে ফেব্রুয়ারিতে জীবন দিয়েছিল তাদেরকে স্মরণ করি। আমি ধন্যবাদ জানাই আজকের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। যারা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেই সংগ্রামে যারা প্রয়াত হয়েছে তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশের অগ্রণী লেখক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০০৩ এ যারা ভূষিত হয়েছেন আমি তাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের ভাষা আন্দোলনের মাস। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বাঙালির সত্তা জাগ্রত হয় এবং এই পথ বেয়েই পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। আমি আজকের দিনে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমি স্মরণ করি ৩০ লক্ষ শহীদ মা বোনকে। ৩ নভেম্বর আমাদের জাতীয় চার নেতাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকেও শ্রদ্ধা জানাই। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, একই সাথে আমি বেদনার সাথে জানাচ্ছি ১৫ আগস্ট, ৭৫ সাল ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং আমাদের বাঙালির জাতির সত্তার প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা যিনি জাতির মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছিলেন। শোষিত বঞ্চিত মানুষকে একটা উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন। ৩ বছর সাত মাস তিন দিন সময় পেয়েছিলেন, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন ও শোষিত এবং বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে অনেক দূর দেশকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশের মর্যাদা পেয়েছিল।
বইমেলার সঙ্গে ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। এখন জেলায় জেলায় বইমেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে তা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে। শিশুদের বইপড়ায় আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবকদের আরও নজর দেয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখন আমাদের যুগ হয়ে গেছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগ। বই প্রকাশ অবশ্যই থাকবে, এটা যাবে না। কারণ, হাতে নিয়ে বই পড়ার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দ আছে। তবে আজকালকার ছেলে-মেয়েরা ট্যাবে করে বই পড়ে। আবার ল্যাপটপেও পড়ে।
এ সময় নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে বলে আফসোস করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বইমেলায় আসায় কোনো মজা নেই। কারণ, স্বাধীনতা নাই। ডানে তাকাব নিরাপত্তা, বায়েও নিরাপত্তা, পিছনে গেলে নিরাপত্তা, সামনে নিরাপত্তা; এই নিরাপত্তার বেড়াজালে স্বাধীনতাটাই হারিয়ে গেছে। এখানে আসলে মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, ছোটবেলার কথা। এই প্রাঙ্গণের সঙ্গে সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন সেই স্বাধীনতাটা নাই। জানি না কবে আবার স্বাধীনতা পাব।
বাংলা একাডেমি অনেক আন্দোলনের সূতিকাগার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে স্বাধীনতা এসেছে। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
বইমেলা উদ্বোধনের আগে ১৬ বিশিষ্টজনের হাতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১১টি ক্যাটাগরিতে ১৬ বিশিষ্টজনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘কালেক্টেড ওয়ার্কস অব শেখ মুজিবুর রহমান: ভলিউম-২’সহ কয়েকটি নতুন গ্রন্থ উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বইমেলা। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর কেউ বাইরে থেকে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবে না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।