শিরোনাম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের বিষয়ে গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
এসময় আইনজীবী খোকনকে সতর্ক করে আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার আপনি কে? রায়ের ব্যাখ্যা দেবেন একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ কথা বলেন। এ সময় আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় থাকা ১৪ নম্বর মামলার শুনানিতে ডায়াসের সামনে আসেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এমপিদের শপথগ্রহণ করার পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, পাঁচ বছর মেয়াদ শেষের আগেই আবার ৩০০ জন শপথ নিয়েছেন। তাদের শপথ অসাংবিধানিক হয়েছে। এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে গণমাধ্যমে এ বক্তব্য দেওয়ায় সতর্ক করেছেন আপিল বিভাগ। আদালত বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের ব্যাখ্যা দেওয়ার আপনি কে? ব্যাখ্যা দেবেন একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট।
খোকনকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো রায়ের বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে আপনি রিভিউ করতে পারেন। পাবলিকলি রায় নিয়ে এসব কী বলে বেড়ান? এভাবে বলতে পারেন না।
এ বিষয়ে খোকন বলেন, রায়ে থাকা ফিকশন নিয়ে কথা বলেছি। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, রায়ের ব্যাখ্যা দেবেন একমাত্র সুপ্রিম কোর্ট। আপনি ব্যাখ্যা দেওয়ার কে? আপিল বিভাগ বলেন, আপনার মামলা আজ শোনবো না। পরে খোকন বলেন, তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করবেন।
গত বছরের ১ আগস্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ২৯০ সংসদ সদস্যদের শপথকে অবৈধ বলে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আপিল বিভাগের এ রায় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ২৯০ সংসদ সদস্য শপথ নেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচিত ব্যক্তিরা সে বছরের ৯ জানুয়ারি শপথ নেন। একই বছরের ২৯ জানুয়ারি ওই সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংবিধানের ৭২ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংসদের মেয়াদ গণনা হবে সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে পাঁচ বছর। তাই দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হয়নি। দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে শপথ নেওয়া হয়েছে। এমন যুক্তিতে একাদশ সংসদের ২৯০ সদস্যের নেওয়া শপথের বৈধতা নিয়ে ২০ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেওয়া শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট খারিজ করেছিলেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ বলেছিলেন, ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার দিন থেকে সংসদ সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করে থাকেন। ফলে আগে শপথ নিলেও তাতে সংবিধান বা আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। ফলে রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এরপর আবেদনকারী ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন।