শিরোনাম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য কঠোর অবস্থানে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য নির্বাচনের মাঠে প্রার্থীদের আচরণ যেমন কঠোরভাবে নজরদারি করা হচ্ছে, সেই সঙ্গে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই শুরু হবে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এই রদবদল। আর আচরণবিধি দেখভালে ৩০০ আসনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৮০২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাচনী অনিয়ম রোধে ৩০০ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ইতোমধ্যে তার ফল পাওয়া যাচ্ছে আচরণবিধি লঙ্ঘনে একের পর প্রার্থীদের তলব ও সতর্ক করার মধ্য দিয়ে।
যাদের মধ্যে রয়েছেন অনেক ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীও। সুষ্ঠু ভোটের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতেও কাজ করছেন তারা। প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যতম বড় বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা ছাড়াই দেশজুড়ে জমে উঠেছে ভোটের রাজনীতি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যারা পেয়েছেন, তারা তো রয়েছেনই মনোনয়নবঞ্চিতরাও সুযোগ পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টিসহ অন্তত ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও যোগ দিয়েছেন ভোট প্রক্রিয়ায়। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উৎসবের আমেজ।
কিন্তু এ উৎসব করতে গিয়েই কোনো কোনো প্রার্থী ভাঙছেন নির্বাচনী আচরণবিধিও। যা প্রতিবারই নিয়মিতভাবে হলেও এ বছর আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন হাকিমরা। মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও নিচ্ছেন ব্যবস্থা। এতে সামনের দিনগুলোতে আচরণবিধি মানার বিষয়ে প্রার্থীরা সতর্ক থাকবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানোর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, খুলনা, মাগুরা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ প্রায় সব বড় শহরে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নির্বাচনী শোডাউন করে চলেছেন। এতে অনেকে ভাঙছেন নির্বাচনী বিধিমালা। কিন্তু অন্যান্য বছর চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও চলতি বছর তফসিল ঘোষণার পর পরই সতর্ক অবস্থানে তারা। বিশেষ করে মাঠে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন নির্বাহী হাকিমরা। কোনো প্রার্থীর নিয়মবহির্ভূত কোনো আচরণ দেখলেই আনছেন জবাবদিহিতার আওতায়। এমনকি ইসির মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে শোকজও।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ইতোমধ্যে ৪ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ ২১ জন প্রার্থীকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুক্রবারের মধ্যে তাদের শোকজের জবাব দিতে বলা হলেও সব প্রার্থীর পক্ষ থেকে সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকদের হেনস্তা করা, অস্ত্রধারী লোকজন নিয়ে শোডাউন, মানুষের চলাচলে বিঘœ ঘটানোসহ বিভিন্ন কারণে গত বৃহস্পতিবার তাদের শোকজ করা হয়।
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা-১৯ আসনের সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী নাটোর-৩ আসনের প্রার্থী জুনাইদ আহমেদ পলক। শোকজ পান সাবেক ২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও। তারা হলেন, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও নরসিংদী-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। আলোচিত ক্রিকেটার মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাকিব আল হাসানকেও শোকজ করা হয়।
এদের মধ্যে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে অস্ত্রধারীসহ শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কারণে। সাকিব আল হাসানকে শোকজ করা হয়েছে বড় গাড়িবহর নিয়ে মাগুরা শহরে ঢোকা এবং নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে। আর চট্টগ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে কারণ দর্শানো হয়, এক সাংবাদিককে হেনস্তা এবং অন্য সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলার অভিযোগে। পরে তাকে তলব করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুধু দলীয় প্রার্থীই নয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি প্রসঙ্গে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলা এবং অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গত ৩০ নভেম্বর বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সময় রদবদলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার কোনো ঝুঁকি নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে মাঠ পর্যায়ে জেলাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তাদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভোটের অনুকূল পরিবেশ তৈরির চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগ নির্বাহী হাকিমরা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাই ইসিকে অবগত করছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, দ্বাদশ সংসদ এবার ভোটের অন্তত ১২ দিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাঠে নামাতে চায় নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে ২৬ বা ২৭ ডিসেম্বর থেকে ভোটের পর দু’-একদিন পর্যন্ত তাদের নিয়োজিত রাখা হতে পারে। তবে আচরণবিধি প্রতিপালন ও নির্বাচনী অনিয়ম রোধে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমরা মাঠে নেমেছেন গত মঙ্গলবার থেকেই।
তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া-আসার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অন্তত ৬ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্স এবং ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা সদস্যদের ভোটের দুই দিন আগে মোতায়েনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মাঠের তথ্য অনুযায়ীই ইউএনও-ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত ॥ বিভিন্ন জেলায় সংসদ নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুযায়ীই ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ওসিদের (থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে হয়েছে। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে এমন রদবদলে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে কি না। তবে সে সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি বলছে, একজন কর্মচারী যে উপজেলা বা জেলায় দায়িত্ব পালন করুক না কেনো তিনি সুষ্ঠুভাবেই দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শনিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তফসিল ঘোষণার পর গত ২২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্রশাসনে কোনো রদবদল করা হবে না। তিনি আরও বলেন, বড় আকারে রদবদল করা হলে পুলিশ-প্রশাসনে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে, এর দায়ভার ইসি কেন নেবে? আরও বলেছিলেন, একশ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে, এ টাকা কে দেবেÑ এমন বিষয় সামনে আনলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, একশ’ কোটি টাকা কেন ব্যয় হবে? তা হলে ওই কমিশনারের কাছে জানতে চাইতে হবে।
ওসি ও ইউএনওদের রদবদল সরকার চেয়েছে, না কি আপনারা চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। আমাদের কমিশনাররা গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ে সফর করেছেন। তাদের যে পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচন কমিশন বসে গত ৩০ নভেম্বর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত এমন প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের কাছে মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশন অনুভব করেছে এ বদলি দরকার।
তিনি বলেন, সব তথ্য তো খোলাখুলি বলা হয় না। নির্বাচন কমিশনাররা মাঠ পর্যায় থেকে যেসব তথ্য পেয়েছে, বিভিন্ন প্রার্থী কিংবা বিভিন্ন কোয়ার্টার থেকে যে তথ্য এসেছে, তার ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেছে যে, বদলি করা প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বদলির কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই। পরে যদি কোনো সিদ্ধান্ত হয়, তখন বলতে পারব। যদি নির্বাচন কমিশন বসে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সেক্ষেত্রে এটা হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে বার্তা দিয়েছি। এটা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আমাদের রিটার্নিং অফিসারদের বলেছি। জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব এসেছিলেন, সব বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। কেউ যেন নিরাপত্তার কোনো ঘাটতিতে না ভোগেন। এর পরও যদি কারও গাফিলতিতে কিছু হয়, তার বিরুদ্ধে ইসি খুব কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
সব প্রার্থীদের বডিগার্ড দেওয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো সম্ভব হবে না। এত বডিগার্ড দেওয়া যাবে না। তবে নিরাপত্তার দায়িত্ব তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা যেন তা নিশ্চিত করতে পারে, সেটাই আমাদের কাম্য।
নিবন্ধিত যে ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপ পিপলস নামে একটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, যেটি আমাদের নিবন্ধিত দল নয়। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আমরা দুই হাজার ৭১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।
পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি এবং একটি স্থানে ডবল জমা দেওয়ার তথ্য জেনেছি এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, আওয়ামী লীগ থেকে ৩০৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছে।
যে পাঁচটি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়নি সেখানে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, সেখানে স্বতন্ত্র হিসেবে পূরণ করেনি সে। মনোনয়নপত্রে আওয়ামী লীগ লেখা আছে। সেটা বাছাইয়ের সময় দেখা যাবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় একটি স্বতন্ত্র হিসেবে, আরেকটি দলীয় হিসেবে পূরণ করতে হয়। তিনি (সংশ্লিষ্ট প্রার্থী) দলীয় হিসেবে পূরণ করেছেন বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন। পরে তার বৈধতা বা অবৈধতা সেটা বাছাইয়ের সময় নির্ধারিত হবে।
সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত সচিব বলেন, যদি কমিশন মনে করে, সেটার প্রয়োজনীয়তা আছে তা হলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ মুহূর্তে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমার জানা নেই।
ইসি কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে ৭ জানুয়ারি। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন। এ সময় আচরণবিধি প্রতিপালনে ৮০২ জন নির্বাহী হাকিম এবং নির্বাচনী অনিয়ম রোধে ৩০০ বিচারিক হাকিম নিয়োগ করা হয়েছে, যারা গত মঙ্গলবার থেকে নেমেছেন নির্বাচনী এলাকায়। এদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এসব ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদেরও আচরণবিধি ভঙের বিরুদ্ধে শোকজ করা হয়।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে কথা হয়েছে। আরও পর্যালোচনার পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করা হবে। তবে নির্বাচন চলাকালে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এক সাক্ষাৎকারে সিইসি বলেন, নির্বাচনে সব সময় দেখেছি সেনাবাহিনী আছে। সেনাবাহিনী নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। প্রয়োজন হলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। যদি প্রয়োজন মনে করি, আমরা চাইলে সেনাবাহিনী দেবে। এতে সংশয় বোধ করার কোনো কারণ নেই।
তিনি জানান, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে এ সংক্রান্ত পরিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত ১ জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকবে। তবে ভোটের দুদিন আগে থেকে ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিন পর্যন্ত (৫-৯ জানুয়ারি) ৫ দিন দায়িত্ব পালন করবেন আরও নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত স্ট্রাইকিং ও মোবাইল ফোর্সের সঙ্গে থাকবেন তারা। এর বাইরে ‘বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা’ করতে নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীও মোতায়েনের ইঙ্গিত রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৭ লাখ সদস্য ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত রাখার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।