শিরোনাম
বেতন বাড়ানো নিয়ে পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কুষ্টিয়ার একজন বিএনপি নেতা কোনাবাড়িতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনে ইন্ধন জোগান ও তাদের ঐক্যবদ্ধ করছিলেন।
রোববার (১২ নভেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন মন্ত্রী।
আজকেও মিরপুরে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ হয়েছে। এর কারণ কী জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পোশাকশ্রমিকদের ৫৬ শতাংশ মজুরি বাড়িয়েছেন। অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। অনেকের মনের সংশয় আছে, দ্বিধা আছে, এরকম আমরা শুনতে পাচ্ছি। সেকেন্ড গ্রেড, থার্ড গ্রেড, ফোর্থ গ্রেড এগুলোর কি হবে। মালিকপক্ষ নিশ্চয়ই এগুলোর সমাধান করবেন, তারা তো ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন। সমাধান করার ক্ষেত্রটি আগুন নয়, সমাধান করার ক্ষেত্রে ভাঙচুর নয়, সমাধান করার ক্ষেত্রে রাস্তা অবরোধ করা নয়।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য যে বিষয়গুলো, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আমরা যা পাচ্ছি। এর প্রায়গুলোই বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট। আমরা দেখেছি কুষ্টিয়ার একজন নেতা কোনাবাড়িতে এসে শ্রমিকদের উৎসাহ দিচ্ছিল, তাদের ঐক্যবদ্ধ করছিল। বিভিন্ন স্থানে যেগুলো ক্যামেরাবন্দি হয়েছে, যাদের আমরা ধরতে পেরেছি- এর সবগুলোই বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট।’
‘এরাই এ নিরীহ শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছেন। তাদের জড়ো করছেন। সর্বক্ষেত্রে ফেল করে এ জায়গায় সফলতা পাওয়া যায় কিনা, তারই একটা ব্যবস্থা হয়তো তারা করতে চাচ্ছেন।’
মজুরির বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে শ্রমিকরা মালিকদের সঙ্গে বসে সমাধান করতে পারতো জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটি না করে তারা এসব করলে নিজেদের যেমন ক্ষতি হয়, দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে, এটা তাদের চিন্তা করা উচিত।’
এর মানে শ্রমিক আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে- জিজ্ঞাসা করতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই ইন্ধন আছে, আমরা সেটিই বলছি যে ইন্ধন রয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেশের সেরা হাসপাতাল থেকে তিনি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন এবং বিদেশ থেকেও বিশেষজ্ঞরা এসে তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। কাজেই চিকিৎসার ঘাটতি হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘সময়মতো নির্বাচনের ডাক দেবে নির্বাচন কমিশন, সবাই সেখানে অংশ নেবেন— এমনটিই জনগণের প্রত্যাশা। আমরা এখনো বলি, তারা নির্বাচনে আসবেন, নির্বাচন ছাড়া সরকার পাল্টানোর আর কোনো সুযোগ নেই। কাজেই নির্বাচনে তাদের আসতে হবে, যদি সরকার পরিবর্তন করতে চায়।’
যারা জ্বালাও-পোড়াও করছেন, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ দেশের জনগণও যথেষ্ট সজাগ হয়েছে। জনগণও তাদের ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা অনেক জায়গায় দেখেছি, যারা পেট্রোলের বোতল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন, তাদের জনগণ ধরিয়ে দিচ্ছেন। জনগণ যখন ঘুরে দাঁড়াবেন, তখন এগুলো অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাবে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে, এ অবস্থা থাকলে তারা নির্বাচনে আসবেন কিনা- প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্বাচনে আসবেন কি-আসবেন না, এটা তাদের এখতিয়ার। আমাদের কথা হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে লঙ্কাকাণ্ডের আগে আমরা বিএনপির কোনো নেতাকর্মীদের ধরিনি। সেখানে যখন নৃশংসতা ও বর্বরতা চলছে, তখন তারা মঞ্চে বসে ছিলেন। তারা তো দুঃখ প্রকাশ করতে পারতেন জাতির উদ্দেশ্যে যে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু কর্মী এসব করেছে। এটা আমাদের কাম্য ছিল না।’
‘কিন্তু দুঃখ প্রকাশের পরিবর্তে তারা অব্যাহত হরতারের ডাক দিয়েছেন। একজন বাসের হেল্পার শুয়ে ছিলেন, বাস পাহারা দিচ্ছিলেন, তাকেসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাসটি। এতে কী প্রমাণ হয়? বিএনপির বড়ো বড়ো নেতারা কী দায় এড়াতে পারবেন? তারা বলতে পারতেন—তোমরা বাসে আগুন দিও না, তোমরা এ মানুষ হত্যা করো না। বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা এসব থেকে বিরত থাকবে বলেই আশা করছি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার সরকারের কাছে দু’টি বিষয়ে কথা বলেছেন, একটি হলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, আরএকটি হলো বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমতো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা যারা করছেন সেইদলের চেয়ারপারসন হলেন বেগম খালেদা জিয়া। আপনারা দেখেছেন ২৮ অক্টোবর কী কর্মকাণ্ড করলো। আমাদের একজন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ১০১ জন পুলিশকে আহত করেছেন, আপনাদের (সাংবাদিক) ছাড় দেয়নি। বাসে হেলপার ঘুমিয়েছিল তাকেসহ বাসে আগুন দিয়েছে।’
তিনি বলেন, এই সবগুলো কর্মকাণ্ড তারা করেছেন, এখানে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কর্মীরা তাদের বাধা দিচ্ছে না। যেখানে জানমাল রক্ষা করতে নিরাপত্তা বাহিনী গেছে, করছে তাদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তাহলে এ সন্ত্রাস বা অগ্নিসন্ত্রাস কারা করছে। আমার মনে হয়, তাদের তথ্যে কোন ভুল আছে। ভুল তথ্য পেয়েই তারা সরকারকে অনুরোধ করেছে। আমি মনে করি আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সঠিক কাজটি করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ভিডিওফুটেজ দেখে যারা প্রধান বিচারপতির বাসায় ঢুকেছে, জার্জেস কম্পাউন্ডে ঢিল ছুড়েছে, আইডিবিতে ঢুকে যারা ভাঙচুর করেছেন সম্পদ বিনষ্ট করেছেন, হাসপাতালে ঢুকে সেবিকাদের মারধর করেছেন, আমাদের নারী নেত্রীদের মারধর করেছেন এসবগুলো যাচাই বাছাই করে যারা এগুলো করেছেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা প্রমাণ ছাড়া কাউকে ধরছি না।