শিরোনাম
প্রমাণিত কোনো অভিযোগ ছাড়া এখন থেকে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। করোনাভাইরোসের এ সময়ে শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ বা অদক্ষতার কারণ দেখিয়েও কাউকে ছাঁটাই করা যাবে না। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার পরও করোনার এই সময়ে যাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আবেদন সাপেক্ষে তাদের পুনর্বহাল করতে হবে।
বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি ছক সংযুক্ত করে গত পাঁচ বছরে চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে এ তথ্য পাঠাতে হবে। সেখানে ২০১৭ সাল থেকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বছরভিত্তিক পদত্যাগকারী বা চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম ও পদবি, তারিখ, কারণ এবং বর্তমান অবস্থান জানাতে হবে। অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় থাকলে ওই ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। চাকরিতে না থাকলে বা ব্যাংকের কাছে তথ্য না থাকলে ব্যাংকে রক্ষিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা দিতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতি থেকে দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল অংকের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেবা দিতে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে মারা গেছেন। করোনার এ সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা হলে কর্মীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে মনোবল ও কর্মস্পৃহা কমবে। ভবিষ্যতে মেধাবী ও অভিজ্ঞরা ব্যাংকে যোগদানে অনীহা দেখাবে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাতের জন্য যা ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং কর্মস্পৃহা অটুট রাখার স্বার্থে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলো।
নির্দেশনার শুরুতে বলা হয়, ২০১৫ সালের এক নির্দেশনার মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইচ্ছামাফিক ঢালাওভাবে ছাঁটাই বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। গতবছর এক নির্দেশনার মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে কর্মীরা যেন অধিকতর উজ্জীবিত হয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়। তবে সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকার পরও শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে চাকুরিচ্যুত বা পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। কোনো-কোনো ক্ষেত্রে পদত্যাগ করার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। এসব ঘটনা আগের সার্কুলার লেটারের উদ্দেশ্য ও নির্দেশনার পরিপন্থি।
জানা গেছে, ব্যাংকারদের অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেসরকারি খাতের ৬টি ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই বিষয়ে বিশেষ পরিদর্শন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যাংকগুলোর মোট ৩ হাজার ৩১৩ জন কর্মকর্তা 'স্বেচ্ছায়' চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে বয়স থাকার পরও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৭০ জনকে। এছাড়া ২০১ জনকে অপসারণ, ৩০ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ১২ কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো বেশিরভাগই জানিয়েছে, স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য মৌখিকভাবে তাদের একটি সময় দেওয়া হয়েছিল। ওই তারিখের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না এমন ভয় দেখানো হয়। এ রকম প্রেক্ষাপটে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন।