শিরোনাম
গণমাধ্যমের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আরোপের বিষয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যে উদ্বেগ দেখা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে দেশটির অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। মার্কিন ভিসানীতিতে গণমাধ্যমকে যুক্ত করা নিয়ে গতকাল শনিবার এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে সম্পাদকদের শীর্ষ সংগঠন এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশ। গোলটেবিল আলোচনায় ভিসানীতি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বিষয় হলেও তা বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক বলে মনে করেন বক্তারা।
গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, মার্কিন ভিসানীতি তাদের নিজস্ব বিষয়। সবাই স্বীকার করে, বাংলাদেশ একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে এটা তাদের জন্য অপমানকর। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন তাদের চাওয়া, বাংলাদেশের সব মানুষের চাওয়ার সঙ্গে এক। তবে, মিডিয়াকে যখন তাদের ‘রেইন অব ফেয়ার’-এর আওতায় আনা হয়েছে বলে বলা হচ্ছে তখন সেটা চিন্তার বিষয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতেও এডিটরস গিল্ড মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা দেবে না দেশটি। ওই ঘোষণার প্রায় চার মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনীতিকসহ কয়েকটি শ্রেণি-পেশার ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। স¤প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভিসানীতি সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপরও এটি প্রয়োগ হতে পারে।
তবে, সোমবার ওয়াশিংটনে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, কাদের ওপর ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে সেটি এরইমধ্যে স্পষ্ট করা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় সদস্যদের ওপরই এটি প্রযোজ্য হবে।
দৈনিক কালবেলার প্রধান সম্পাদক আবেদ খান বলেন, ভিসানীতি বিষয়টি আমার কাছে খুবই বিস্ময়কর বলে মনে হয়। কারণ, ভিসানীতি হঠাৎ করে আমাদের ওপর আরোপ করা হবেই বা কেন? আমরা সেটাকে গ্রহণ করলামই বা কেন? আর ভাবছি কেন কিংবা একে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণতই বা করছি কেন?’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান এখন মিডিয়ার ক্ষেত্রে, এটা এই মুহূর্তে আপনি উড়িয়েও দিতে পারবেন না,আবার আপনি গ্রহণও করতে পারবেন না।
এসবের পাশাপাশি বিশিষ্টজনরা বলেন, গণমাধ্যমের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি সেদেশের নিজস্ব বিষয় হলেও তা অপমানজনক। তবে, সব প্রতিকূলতার পরেও এদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমির বলেন, তথ্য পাওয়ার অধিকার সবার আছে। কারও যদি আমাদের নিয়ে বিরূপ মনোভাব থাকে তা আলাপ করে নিরসন করা উচিত। বাইরে থেকে যে কেউ পরামর্শ দিতেই পারে। কিন্তু তা গ্রহণ বা বর্জন করা নিজস্ব ব্যাপার বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন আছে। আইনগুলো ঠিকমতো প্রয়োগ না করার কারণে অন্যরা এই ধরনের সুযোগ পায়।’
বিশেষ কারণে এ ভিসা নীতি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, ভূ-রাজনীতির সঙ্গে এ ভিসা নীতি জড়িত। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা এখন নাজুক। এ অবস্থায় রাজনীতিবিদদের আত্মসমালোচনা করার চর্চা করতে হবে। ভিসানীতি নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা অনেকটা ব্ল্যাকমেইল করার মতো বলে মন্তব্য করছেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম।
দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান প্রশ্ন রাখেন মিডিয়া কীভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে? গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি আরোপ নিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার না। মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, গণমাধ্যম কী করে অবাধ নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম ব্যবহার করে। গণমাধ্যম যেহেতু রাজনীতির বাইরে না, আমরা সব সময় ব্যবহৃত হয়েছি। ভিসানীতি একটা চাপ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গণমাধ্যমের উপর এই নীতি আনার মধ্য দিয়ে চাপ তৈরি করা হলো। মিডিয়া কী করে অবাধ নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে তা যুক্তরাষ্ট্রকে পরিষ্কার করতে হবে। কারণ বিভিন্ন নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে এটার অপব্যবহার করা শুরু হয়েছে।’