বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ফানাম নিউজ
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:২০

শান্তির সপক্ষে সব সময় কাজ করে বাংলাদেশ। শুধু অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক শান্তি নয়, বৈশ্বিক শান্তির জন্যও বাংলাদেশের সচেষ্ট প্রয়াস আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাঁচ জন শান্তিরক্ষীকে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধপ্রবণ দেশে শান্তিরক্ষায় নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠা। সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে পররাষ্ট্রনীতি কী হবে, সেটি বলা আছে। ওই অনুচ্ছেদে যেকোনও আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়টি উল্লেখ আছে। ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এর বড় প্রভাব আছে।’

সংবিধানে যা বলা আছে, বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটুকু, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্তত তিনটি বড় উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। যেখানে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, দ্বিতীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং তৃতীয় হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ।’

শান্তির জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয়

১৯৮০ সাল থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের গণহত্যার শিকার হয়েছে রোহিঙ্গারা। দফায় দফায় প্রাণ রক্ষায় তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে এবং বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে।

শহীদুল হক বলেন, ‘উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের কনভেনশনে বাংলাদেশ সই করেনি। তারপরও রোহিঙ্গাদের সব সময় আশ্রয় দিয়েছে। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে পালিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় না দিলে প্রাণের ভয়ে তারা এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারতো। ফলে আঞ্চলিক একটি বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারতো। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ।’

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান

২০০৯ সালের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সরকারের একটি বড় নীতি এবং দৃঢ় ও সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখা গেছে।

শহীদুল হকের মতে, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স— এই নীতির অধীনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর ফলে পাশ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন বিছিন্নতাবাদীদের ফেরত পাঠানো হয়েছিল।’

এর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয় শান্তি ফিরে এসেছে এবং তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের গতি এসেছে বলেও জানান তিনি।

শান্তিরক্ষীদের অবদান

পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধপ্রবণ দেশে শান্তিরক্ষী মিশন পাঠায় জাতিসংঘ এবং ওই কার্যক্রমে সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।

শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছি। বর্তমানে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে দুটি জিনিস বিবেচনায় নিতে হবে। একটি হচ্ছে সংখ্যা এবং অপরটি গুণগত মান। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যেখানেই অংশ নিয়েছেন, সেখানে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।’

মোটাদাগে বলা যায়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার জন্য যতটুকু সম্ভব, তার সবটুকু করার চেষ্টা করে বাংলাদেশ এবং সরকারের পররাষ্ট্রনীতিও সেভাবেই পরিচালিত হয় বলে তিনি জানান।