শিরোনাম
দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও কখনো সরাসরি রাজনীতিতে আসেননি তিনি। যিনি ‘ছোট আপা’ বলে দলের নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। বাংলা ও বাঙালির প্রয়োজনে তিনি নির্মোহ একজন মানুষ। একদম সাদাসিধে আটপৌরে বাঙালি নারী তিনি। চরিত্রে কখনো আদিখ্যেতা কিংবা অহংকার মনোবৃত্তি পোষণ করেননি। তিনি আর কেউ নন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা।
মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব পর্দার অন্তরালে থেকে বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন সাহস ও অনুপ্রেরণা; যার অনুপ্রেরণায় শেখ মুজিব হতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এখন পর্দার অন্তরালে বড়বোন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাশে থেকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার সাদামাটা জীবনচরিত এবং অতিথিপরায়ণতা সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে বিশ্বজনীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি অচল, শেখ রেহানা ছাড়া তিনি পরিপূর্ণ নন। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা নন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুঃসময়ে, বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি যেন আশা-ভরসার স্থান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৯ সালের ১০ মে, সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলন থেকে প্রথমবারের মতো সপরিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচারের জন্য দাবি তোলা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ঘৃণ্য ঐ হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি তোলেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। সম্মেলনের প্রধান অতিথি জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁর পাঠানো বাণী পাঠ করেন ছোট বোন শেখ রেহানা। পৈশাচিক সেই হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন শেখ রেহানা যা এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এটাই ছিল কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে শেখ রেহানার প্রথম বক্তব্য রাখা।
২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার পরে দেশরত্ন শেখ হাসিনা ভেঙে পড়লে সাহস হয়ে পাশে থাকেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানা সেদিন দলের ঐক্য ধরে রাখতে পেরেছিলেন বিধায়ই আজ আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
২০০৭-০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে শেখ হাসিনা কারাবন্দি হয়েছিলেন। সে সময়ও শেখ রেহানা তাঁর বোনের মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পর্দার আড়ালে থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে লন্ডন থেকেই তিনি ব্যাপক তৎপরতা চালান। ওই দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের সাহস জোগান তিনি।
রাজনীতিতে না জড়ালেও জনহিতৈষী কাজেও সব সময় ভূমিকা রেখে আসছেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘর করে দেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন। একইভাবে ধানমন্ডিতে তাঁর নামে বরাদ্দকৃত বাড়িটিও দান করে দিয়েছেন দেশের কাজে।
একইসঙ্গে শেখ রেহানা একজন গর্বিত মা। সততার অনুকরণীয় আদর্শ এক রত্নগর্ভা মা তিনি। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন এমপি। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি।
ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
মা-বাবার আদরের ‘মুন্না’, প্রাণপ্রিয় ছোট ভাই শেখ রাসেলের ‘দেনা আপা’, আর আমাদের ‘ছোট আপা’ শেখ রেহানার আজ জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ঘরে জন্ম নেয়া এই মহীয়সী নারীর আজ ৬৯তম জন্মদিন। আপামর বাঙ্গালির প্রিয় ছোট আপা শেখ রেহানাকে প্রাণাধিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।