কমিশনের নির্ধারিত এলপিজির দাম কার্যকর করবে কে?

ফানাম নিউজ
  ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪৩

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানির পর এলপিজির দর নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সবাই আশা করেছিল, এবার অন্তত বিইআরসি ঘোষণা কার্যকর হবে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে এখনও এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। দর নিয়ন্ত্রণে বার বার হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিলেও বিইআরসি এবং সরকার কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি।

কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল এলপিজির দরের আদেশের সংবাদ সম্মেলনেই জানিয়েছিলেন, কমিশনের জনবল মাত্র ৩৫ জন। এত স্বল্প জনবল দিয়ে তাদের পক্ষে সারাদেশে দর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এরপরও সীমিত আকারে হলেও তারা এবার মাঠে নামবেন।

একইসঙ্গে তিনি জানান, দর কার্যকরে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে সরকারকে। জেলা প্রশাসন যদি এ বিষয়ে সহায়তা করে তাহলে সারাদেশে কমিশনের ঘোষণা বাস্তবায়ন সম্ভব। কমিশন আদালতের আদেশে সারাদেশে এলপিজির দর নির্ধারণ করছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যে আদেশ মানছেন না —সে বিষয়টি এখনও আদালতের নজরে আনেনি কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু আদালত দর নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিল তাই বিষয়টি আদালতকে জানানো উচিত ছিল। এক্ষেত্রে আদালত কোনও নির্দেশনা দিলে তা মানা সবার জন্য বাধ্যতামূলক হতো। এক্ষেত্রে আদালত সরকারকেও কমিশনের আদেশ বাস্তবায়নের কার্যকর নির্দেশ দিতে পারতো। অতীতে দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে আদেশ অমান্যকারীদের আদালত ডেকে পাঠিয়েছে। এক্ষেত্রে তেমন কিছু হলে মাঠ পর্যায়ে সাধারণ জনগণ উপকৃত হতো।

গত ১০ অক্টোবর কমিশন এক সংবাদ সম্মেলন করে বেসরকারি এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা নির্ধারণ করে। একইভাবে বাজারে বিক্রি হওয়া নানা ওজনের যেমন সাড়ে ৫ থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি সিলিন্ডারের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে প্রথমবার ১২ এপ্রিল এই দাম ঘোষণার উদ্যোগ নেয় তারা। এরপর ধাপে ধাপে পাঁচ বার দাম ঘোষণা করেছে। এরমধ্যে বেসরকারি ব্যবসায়ীরা তাদের বোতলজাতকরণ, মজুতকরণসহ চার্জগুলো ঠিক হয়নি বলে এতদিন কমিশনের নির্ধারিত দাম মানেনি।

সর্বশেষ গত ১০ অক্টোবর অপারেটরদের দাবিতে নতুন করে শুনানি করে তাদের এসব চার্জের টাকাও বাড়িয়েছে কমিশন। একইসঙ্গে সরকারি এলপিজির দামও ঘোষণা করেছে, আমদানি করা হয় না বলে একই দাম রেখেছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারও (১৪ অক্টোবর) বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগেরই মতো ‘যার যা ইচ্ছা’ দামে এলপিজি বিক্রি করছেন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও সরকারি নির্দেশিত দরে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না।

কাঁঠালবাগান বাজারের একজন খুচরা এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতা জানান, ১২ কেজি এলপিজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। কেন সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দামতো ১ হাজার ২৫৯ টাকা করেছেন। আমাদের তো কিছু লাভ রাখতেই হয়। খুব বেশি তো আমরা রাখছি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা এলপিজির সেলস অব হেড জাকারিয়া জালাল বলেন, আমরা যা দাবি করেছিলাম তার পুরোটা কমিশন রাখেনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে দাম বাড়ছে তাতে করে ভবিষ্যতে এলপিজি গ্রাহকই আমরা হারাতে পারি। তাই এর চেয়ে বেশি দামে এলপিজি আমরা বিক্রি করতেও চাই না। বাজারে এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।’

আপনারা কোনও নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা (গ্রাহক) এমন কিছু পেলে মামলা করে দেন। আমরা কোনও নির্দেশনা দেইনি। আমরা চাই না এর (নির্ধারিত দর) চেয়ে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করতে।’

বাজারে যে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না এ বিষয়ে কমিশনের কি করার আছে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আমরা অভিযোগ পেলেই বিইআরসির আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। জনবল না থাকায় সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনসহ সবাইকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলছি আমরা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, এবার কমিশন যে দাম নির্ধারণ করেছে তা একেবারেই ব্যবসায়ীদের পক্ষে। এই দাম ভোক্তা স্বার্থে করা হয়নি। আমরা পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন