শিরোনাম
আইনবিহর্ভূত জামিন দেয়ার অভিযোগে শুনানিতে কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে উদ্দেশে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, আপনি সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ 'টেম্পারিং' করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি। জেনে বুঝে আপনি অপরাধ করেছেন।
এসময় জেলা জজ পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতে আর্জি জানান, কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত।
এ বিষয়ে শুনানিতে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এসব কথা হয়। শুনানির এক পর্যায়ে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডাকেন হাইকোর্ট। । এক পর্যায়ে বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি, ক্রাইম করেছেন।
এ সময় জেলা জজের আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তখন হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই, অনুতপ্তও নন।
পরে আদালত আসামিদের আইনভঙ্গ করে জামিন দেয়ার ঘটনায় মোহাম্মদ ইসমাঈলের বিরুদ্ধে আদেশের জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন। আইনবহির্ভূত জামিন দেয়ার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে গতকাল তলব করেছিলেনহাইকোর্ট। সেই ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলেও লিখিত ব্যাখ্যা যথাযথ না হওয়ায় ক্ষমার আবেদন ‘গ্রহণ' করেনি আদালত। পরে এই বিষয়ে শুনানির জন্য আজ (বৃহস্পতিবার) দিন ধার্য ছিল। এ বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দ্বৈত বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ আদেশ দিয়েছিলেন। এ সময় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, আব্দুন নূর দুলাল। অপরপক্ষে ছিলেন এ বিএম আলতাফ হোসেন ও এস এম আমজাদুল হক।
পুরে আইনজীবী আমজাদুল হক বলেছিলেন, গত ২১ মে দুপুরে ৯ আসামি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এদিকে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আদেশের কপি পাননি- উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন। বিচারিক হাকিম আদালতের জামিন আবেদন নামঞ্জুরের আদেশ ও অন্যান্য কাগজপত্র দায়রা জজ আদালতে দাখিল করা হয়নি। আসামিদের হাজতবাসের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয় বলে আদেশে উল্লেখ করেন জেলা দায়রা জজ। অথচ ৯ আসামিকে হাজতেই নেয়া হয়নি। তাই জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে তাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জমি দখল নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি দেখানো ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান খোদেস্তা বেগম রিনা। গত ১১ এপ্রিল এই মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইলে তাদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়ে কক্সবাজারের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এরপর গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। কিন্তু একইদিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন এবং তাদের আবেদন মঞ্জুর হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন চেয়ারম্যান রিনা।