শিরোনাম
তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারা, কেউ যাতে পুরো বাজার দখল করতে না পারে সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বিটিআরসি আবারও নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। যে প্রতিষ্ঠান এই কাজ করবে তাকে এসএমপি (সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার) ঘোষণা করবে সংস্থাটি। জানা গেছে, এবার মোবাইল ফোনের টাওয়ার খাতে আসছে এসএমপি। একটি মোবাইল টাওয়ার একচেটিয়া ব্যবসা করছে এ খাতে। প্রতিষ্ঠানটি যাতে না করতে পারে এবং এ খাতের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের নভেম্বরে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) প্রবিধান ঘোষণা করে বিটিআরসি। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট সীমার ওপরে কেউ গেলে তাকে আটকে ফেলা। বিটিআরসির প্রবিধানের আওতায় প্রথমেই পড়ে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। ওই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে এসএমপি ঘোষণা করে বিটিআরসি। মূলত, টেলিযোগাযোগ খাতে কোনও প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতেই এই উদ্যোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি টাওয়ার কোম্পানি এই খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। প্রায় ৯০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার ওই প্রতিষ্ঠানটির। এই ধরনের ‘মনোপলি’ ঠেকাতে ওই টাওয়ার প্রতিষ্ঠানকে এসএমপি ঘোষণা করা হচ্ছে। সূত্র জানাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির নাম ইডটকো। এর টাওয়ারের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।
এ বিষয় জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, একটি কোম্পানি একাই ৯০ ভাগ ব্যবসা নিয়ে যাবে, তা হতে পারে না। টাওয়ার খাতে লাইসেন্স পাওয়া আরও প্রতিষ্ঠান আছে। সেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা না পেলে তো মারা যাবে। আমরা আজ (১১ অক্টোবর) একটি এসএমপির অনুমোদন দিয়েছি। শিগগিরই বিটিআরসি থেকে এটির ঘোষণা আসবে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা একে একে সব খাতে বিষয়টি (এসএমপি) প্রয়োগ করবো। ৪০ শতাংশের ওপরে কোনও প্রতিষ্ঠান বাজার দখল করলে তাকে এসএমপি ঘোষণা করা হবে। আইটিসি (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল), আইআই জি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে), আইজিডাব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে), আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ইত্যাদি খাতেও তো এক চেটিয়া ব্যবসা হচ্ছে। সেসব খাতে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে বিষয়টি আছে। আমরা পুরো খাতেই নজর রেখেছি।
এসএমপি বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, মোবাইল ফোনের টাওয়ার নিয়ে এসএমপির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। কোনও প্রতিষ্ঠান যাতে এককভাবে বাজার দখল করতে না পারে, বাজারে মনোপলি করতে না পারে সেজন্যই এই উদ্যোগ। এসএমপির মাধ্যমে টাওয়ার খাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হবে।
যা আছে প্রবিধানে
বিটিআরসি ২০১৯ সালের নভেম্বরে এসএমপি প্রবিধান ঘোষণা করে। প্রবিধানের ৭ (১১) ধারা অনুযায়ী, তিনটি নিয়ামকের একটি যদি ৪০ ভাগের বেশি থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান এসএমপি ঘোষিত হবে। ক্যাটাগরি তিনটি হলো- গ্রাহক, অর্জিত রাজস্ব ও তরঙ্গ।
টাওয়ার কোম্পানির সংখ্যা
দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার অবকাঠামো ভাগাভাগি সংক্রান্ত টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিয়েছে ইডটকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিডেট, সামিট পাওয়ার লিমিটেড, কীর্তনখোলা টাওয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড এবং এবি হাইটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আইটিসির লাইসেন্স রয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু একচেটিয়া ব্যবসা করছে দু’টি প্রতিষ্ঠান। চারটির অবস্থা খুব খারাপ। তাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। তারা আরও বলেন, দেশে এখন ২৭টি আইআইজি সক্রিয় আছে, যদিও লাইসেন্স পাওয়ার সংখ্যা আরও বেশি। এর মধ্যে মাত্র ৮-১০টা প্রতিষ্ঠানের দখলে দেশের মোট ব্যবহার হওয়া (২৬০০ জিবিপিএস) ব্যান্ডউইথের বড় একটা অংশ। অপারেটরগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আইএসপিতেও একই অবস্থা। এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারবে এসএমপির ঘোষণা। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন