শিরোনাম
মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার ছিলেন এসএসসি পাশ সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮)। মধ্যপ্রাচ্যে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভনে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। প্রতারণার মাধ্যমে রাজধানীর বাড্ডার লিংক রোগে গড়ে তুলেছেন তিনটি ওভারসিজ।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের মূল হোতা সাইফুল ইসলামসহ (টুটুল) ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৩ অক্টোবর রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল বাড্ডার লিংক রোডস্থ টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজে অভিযান চালিয়ে ৪ জন ভিকটিম (২ জন পুরুষ ও ২ জন নারী) এবং গ্রেফতারদের কাছ থেকে ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মুঠোফোন ৫টি নিবন্ধন খাতা, ৩টি সিম কার্ড,৪টি ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার এবং নগদ ১০ হাজার ৭০০ টাকা উদ্ধার করে।
গ্রেফতার অন্য ব্যক্তিরা হলেন- মো. তৈয়ব আলী (৪৫), শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন ওরফে লিমন (৩৮), মারুফ হাসান (৩৭), জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), লালটু ইসলাম (২৮), আলামিন হোসাইন (৩০) ও আবদুল্লাহ আল মামুন (৫৪)।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্যাটালিয়ন-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
তিনি জানান, মুদিদোকানি সাইফুল ইসলাম (টুটুল) মাঝে মাঝে ঢাকায় আসত। অল্পসময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার লোভে ধীরে ধীরে মানবপাচারকারী কোনো একটি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ও চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতে থাকে। পরবর্তীতে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতারণামূলকভাবে ‘টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ’ নামে ৩টি এজেন্সি অফিস খুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী-পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় টুটুল।
টুটুলের এই প্রতারণার কাজে অন্যতম সহযোগী আবু তৈয়ব। সে কোনো পড়াশুনা জানে না। চায়ের দোকান ছিল তার। টুটুলের প্ররোচনায় মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ও বহু লোককে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে পাঠানো এবং দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা-পয়সা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
তৈয়ব নিজেকে দেশের একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চাকরি এবং দেশের নামি-দামি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কয়েকজন ভিকটিমকে চাকরি প্রদানের ভুয়া নিয়োগপত্রও দিয়েছে।
এ ছাড়া গ্রেফতারকৃত বাকিরা মাঠ পর্যায়ে টার্গেট সংগ্রহ, প্রার্থীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা, কথিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, টাকা সংগ্রহ, প্রাথমিক মেডিক্যাল সম্পূর্ণ করাসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করতো। টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে এই চক্র মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করতো। তাদের কয়েকটি টিম দেশজুড়ে কাজ করে।
বিদেশে বাসাবাড়িতে নারীদের বিক্রি, আর কঠোর পরিশ্রমে পুরুষদের ব্যবহার
র্যাব বলছে, চক্রের কয়েকজন সদস্য অফিস স্টাফ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করত। এতে ভিকটিমদের মনে আর কোনো সন্দেহ থাকত না। পাসপোর্ট অফিসের দালালের সঙ্গেও সখ্য ছিল চক্রের সদস্যদের। কথিত মেডিকেল টেস্ট শেষে নারী ভিকটিমদের বাসাবাড়িতে বিক্রি এবং পুরুষ ভিকটিমদের অমানবিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, জর্ডান ও লেবাননে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত তারা। ভিকটিমরা বিদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারত না। যাদের বিদেশে পাঠানো সম্ভব হতো না তারা টাকা ফেরতে যোগাযোগ করলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।
অবৈধ হলেও যেভাবে পাচার করা হতো
বৈধতা না থাকার পরও কীভাবে মানবপাচার করেছিল টুটুল-তৈয়ব চক্র? জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের ৩টি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের বৈধতা না থাকায় বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষকে পাচার করেছে। এছাড়া শতাধিক মানুষকে বিদেশে পাঠানো কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মতো ভুক্তভোগী র্যাবে যোগাযোগ করেছেন। প্রতারিত ভুক্তভোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সূত্রঃ যুগান্তর