শিরোনাম
রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্প এখন হজ গমনেচ্ছুদের পদচারণায় মুখর। সকাল থেকে প্রতিটি ফ্লাইটই যথাসময়ে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এবার হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে হজযাত্রীরা বেশ সন্তুষ্ট। হজযাত্রার প্রথম দিন ভিসা জটিলতায় আটকে যাওয়া ১৪০ জন যাত্রীর ভিসা হওয়ায় তারাও সোমবার (২২ মে) বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।
হজ অফিস সূত্র জানায়, হজযাত্রার প্রথম দিন রোববার ভোর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৯টি ফ্লাইটে ৩ হাজার ৪৬৯ জন হজযাত্রী সৌদি পৌঁছেছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ৭টি ফ্লাইটে ২ হাজার ৭০৯ জন ও দুটি বেসরকারি ফ্লাইটে ৭৬০ জন হজযাত্রী সৌদি পৌঁছান।
সোমবার হজযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা হবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ৫টি ও দুটি বেসরকারি ফ্লাইটে প্রায় ২ হাজার ৫১১ জন হজযাত্রী পবিত্র মক্কা নগরীতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিন সকালে আশকোনা হজ ক্যাম্পে গিয়ে হজযাত্রীদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে ফ্লাইট নিশ্চিত হলেও এখনো ভিসা ও টিকিট পাননি অনেকে। প্রথম দিনে ১৪০ হজযাত্রীর ভিসা না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছাপ দেখা গেছে। আবার শুরুতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাবারের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এখন জানানো হচ্ছে, এ খরচ ব্যক্তিগত। খাবারের জন্য বরাদ্দের টাকা হজযাত্রীদের ব্যাংক হিসাবে ফেরত পাঠানো হবে। এ নিয়েও হজযাত্রীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
গত শনিবার (২০ মে) দিনগত রাত (রোববার ভোর) ৩টা ২০ মিনিটে চলতি বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট ঢাকা ছাড়ে। প্রথম ফ্লাইটে ৪১৫ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের হজ ফ্লাইট বিজি-৩০০১-এ এসব হজযাত্রী সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অসুবিধা নাই। ভিসা বা অন্যকোনো জটিলতা এখন আর দেখছি না। নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের ফ্লাইট ছেড়ে যাচ্ছে। হজযাত্রী রেডি আছে, ভিসা প্রকিউর হয়েছে।
হজ অফিস জানায়, সোমবার পর্যন্ত ৩১ হাজার ৪৬৪ হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৩১৯টি ফ্লাইটে হজ পালনে সৌদি আরব যাবেন ১ লাখ ২০ হাজার ৯৯৪ জন। যার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ২৫৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১ লাখ ১০ হাজার ৭৪১ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের মধ্যে ৪ হাজার ৫৭৭ জনের ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৬ হাজার ৮৮৭ জনের ভিসা হয়েছে।
জামালপুর থেকে সোমবার সকালে হজ ক্যাম্পে এসেছেন মনির হাসান তারা। তিনি বলেন, এখন তো ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগতো যদি পাসপোর্ট, ভিসা একটু আগে পেতাম। তাহলে একটু নিশ্চিন্তে থাকতাম। আমার ফ্লাইট ২৪ মে সকাল ১০টায়, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাসপোর্ট-ভিসা পাইনি।
কক্সবাজারের বাসিন্দা শহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমরা খুশি। এয়ারপোর্টে যে কাজগুলো করতে হয়, সেগুলো ক্যাম্পেই করা যাচ্ছে। একটু রিল্যাক্স থাকতে পারছি। যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা থাকে। এবার তা নেই। ব্যাগে স্টিকার করা, নামার পর কী হবে সবকিছু এখান থেকেই করা হচ্ছে। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আল্লাহর মেহমান হিসেবে যেতে পারছি।
হাজারও হজযাত্রীর উপস্থিতি ঘিরে হজ ক্যাম্পের বিপরীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে বেচাকেনা বেড়ে গেছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে হজের জন্য প্রয়োজনীয় ইহরামের কাপড়, বুকে ও কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, ছাতা, ছুরি ইত্যাদি পণ্য। ব্যস্ত সময় পার করছেন মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হজযাত্রীরা।
মেসার্স মিরাজ আল ইহরাম হাউজের ব্যবসায়ী রাজন বলেন, সারা বছর টুকটাক বেচাকেনা হয় ওমরাহ উপলক্ষে। তবে হজের মৌসুমে এখন বেচাকেনা একটু বেশি। ইহরামের কাপড় বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। বেল্ট ১০০ থেকে ৩০০ টাকায়। বিভিন্ন আকারের ব্যাগের মধ্যে কোমরে বাঁধার ও পাসপোর্ট ব্যাগ ৬০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বড় ব্যাগ ১৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। জায়নামাজ, টুপি, তজবি, নেল কাটার, আয়না ও ছাতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র মানভেদে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। এছাড়া হজযাত্রীদের নাম, পাসপোর্ট ও ফোন নম্বর লিখে দিতে আর্টিস্টরা ব্যাগপ্রতি নিচ্ছেন ১০০-১৫০ টাকা।