শিরোনাম
জাল নথিপত্রে রপ্তানির আড়ালে ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮২ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সাবিহা সাকি ফ্যাশন, এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন, ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ও ইলহাম। প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি জাতীয় পণ্য ৭টি দেশে রপ্তানি করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কাকরাইলে সংস্থাটির কার্যালয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ ফখরুল আলম এ তথ্য জানান।
শুল্ক গোয়েন্দার ডিজি বলেন, আমরা প্রথমে সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির বিষযটি উদঘাটন করি। তারই ধারাবাহিকতায় আরও তিন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য পাই। তাদের কোনো এলসি ছিল না, আর রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছে। ৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি দেখানো হয়। যার ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ১০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৮২ কোটি টাকা। আমাদের ধারণা অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
তিনি বলেন, যখন কোনো জালিয়াত চক্র অর্থ পাচারের উদ্দেশ্য রপ্তানি করে, তখন তার উদ্দেশ্যই থাকে রপ্তানি মূল্য কোনোভাবেই দেশে আসবে না। সেক্ষেত্রে তারা পণ্যের মূল্য কোনো না কোনোভাবে কম দেখানোর চেষ্টা করে। তার প্রধান লক্ষ্যই হলো টাকা বিদেশে পাচার করা। সেক্ষেত্রে তারা পণ্য রপ্তানির কথা বললেও উদ্দেশ্য হলো পণ্যের বিপরীতে টাকা আর দেশে আসবে না। বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করে অর্থ পাচার করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলো লিমেক্স সিপার্স লিমিটেড, এরইমধ্যে তাদের আইডি নম্বর লক করা হয়েছে। ৪টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এধরনের কার্যক্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা জানায়, সাবিহা সাকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে কিন্তু পণ্যের রপ্তানি মূল্য বা বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসেনি। গত ৩১ জানুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দার একটি টিম চট্টগ্রামের উত্তর পতেঙ্গা অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির টি-শার্ট ও লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য রপ্তানির প্রমাণ পাওয়া যায়। যা সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করা হয়েছে। তদন্তে দেখা যায় সাবিহা সাইকি ফ্যাশন মোট ৮৬টি পণ্যচালানের বিপরীতে ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টি-শার্ট, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার বা ২১ কোটি টাকা। আর ওই টাকা দেশে আসার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন নামীয় প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১৩৮২টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ১৪ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ মার্কিন ডলার বা ২৮২ কোটি টাকা।
ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন জালিয়াতির মাধ্যমে ২৭৩টি পণ্যচালান রপ্তানি করে। পণ্যচালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ২ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্রাউজার, টপস রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ৬৫ লাখ ৪ হাজার ৯৩২ মার্কিন ডলার বা ৬২ কোটি টাকা।
আর ইলহাম নামীয় প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে রপ্তানি দলিল জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৯টি চালান রপ্তানি করে। রপ্তানি করা পণ্য চালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ৬৬০ মেট্রিক টন টি-শার্ট, ট্যাংক টপ, লেডিস ড্রেস প্রভৃতি রপ্তানি করে। যার বিনিময় মূল্য ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮৫ মার্কিন ডলার বা ১৭ কোটি টাকা।