সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন কতটা জরুরি?

ফানাম নিউজ
  ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৩০

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন যোগ্য বিচারক নিয়োগ। এ লক্ষ্য নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বিচারক নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

২০০৭ সালের ১৩ এপ্রিল এক রিট মামলার রায়ে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বেশ কিছু যোগ্যতার বর্ণনা তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। ওই রায়ে ৭টি যোগ্যতাকে নির্ণায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে প্রার্থীকে অবশ্যই সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির প্রতি অকৃত্রিম অনুগত থাকতে হবে। মেধাসম্পন্ন, পেশাগত দক্ষতা সমৃদ্ধ, সূক্ষ্ম বিচারশক্তি সম্পন্ন ও ন্যায়পরায়ণদেরই কেবল সুপারিশ করা যাবে।

তাছাড়া একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সকল যোগ্যতাসম্পন্ন ইচ্ছুক প্রার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা না থাকায় ইতোমধ্যে দেশের ও বিচার ব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাতবারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে তিনজন বিচারপতির (হাইকোর্ট বিভাগের) বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আরও অনেক বিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের গুঞ্জন আছে। বিচারপতি নিয়োগের পরে তদন্ত না করে, নিয়োগের পূর্বেই তাদের যোগ্যতা, সততা সম্পর্কে তদন্ত করা উচিত বলে মনে করি। শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে কাউকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দেওয়া কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন বলেন, ‘নীতিমালার ফলে বিচারক নিয়োগ নিয়মের মধ্যে হবে। তাতে সবার আস্থা থাকবে। বিচার বিভাগের গৌরবও বাড়বে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘আমাদের দেশে বিচারক নিয়োগে নীতিমালার চেয়ে ১৯৬৭ সালের একটি কার্যকর ও শক্তিশালী আইন (বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ক্যাননস অব প্রফেশনাল কন্ডাক্ট এন্ড এটিকুয়েট) বলবৎ রয়েছে। সে আইনে বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিকভাবে জড়িত নন এমন কোনও আইনজীবী, যার সক্ষমতা রয়েছে ও বিচার বিভাগের মান-মর্যাদার বিষয়ে যিনি সমুন্নত ভূমিকা রাখতে পারবেন— তাকে বিচারক নিযুক্তিতে যাচাই-বাছাই করার কথা বলা আছে। তবে কে বা কারা যাচাই-বাছাই করবেন, তা নিয়ে কিছু বলা নেই। তাই আমি মনে করি, বিদ্যমান ওই আইনের মাধ্যমে দক্ষ বিচারক নিয়োগ সম্ভব।’

জানা গেছে, ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ সভাপতি ও বর্তমান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলী সম্পাদক থাকাকালীন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি রেজুলেশন গ্রহণ করে। সেখানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে রাজনৈতিক যোগ্যতাকে বিবেচনা না করে দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম একই সিদ্ধান্তের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তখনকার প্রধান বিচারপতির নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলেন।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু বিচারক নিয়োগের নীতিমালা বা নিয়োগের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নির্দেশনা পালন সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি। তাই এ নীতিমালা প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন