তিনি দুদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন, বিবস্ত্র লাশ পাওয়া গেল গাড়িতে

ফানাম নিউজ
  ১০ অক্টোবর ২০২১, ২৩:৪০

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণিতে ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে উদ্ধার করা অর্ধগলিত লাশটি চালক সজল কুমার ঘোষের (৪০)। শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, উদ্ধারের সময় সজলের লাশ চালকের পেছনের আসনে লম্বালম্বি করে শোয়ানো অবস্থায় ছিল। তাঁর শরীরে কোনো পোশাক ছিল না। পুলিশের ধারণা, সজলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। সুরতহাল করার সময় তাঁর মুখমণ্ডলে আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এতে মনে হচ্ছে, কেউ তাঁর মুখ চেপে ধরেছিল। গাড়ির ভেতরে সজলের কোনো পোশাক পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মুঠোফোনটি সচল অবস্থায় পাওয়া যায়।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার আশিক হাসান বলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সজলকে হত্যা করা হয়েছে। দুদিন ধরে সজলের লাশ গাড়ির মধ্যেই ছিল। তাঁর মুঠোফোনের অবস্থান এবং প্রযুক্তিগত তদন্তে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি বলেন, গাড়ির ভেতরে গরমের কারণে লাশ দ্রুত পচে গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সজলের লাশ যে গাড়িটি থেকে উদ্ধার করা হয়, সেটি টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি)। গাড়িটির মালিক ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কালাম হোসেন। ঢাকার সাতরাস্তা থেকে মহাখালী যাওয়ার পথে তিব্বত মোড়ের মূল সড়কের এক পাশে গাড়িটি দুদিন ধরে পড়ে ছিল।

সজল তাঁর স্ত্রী জয়া রানী ঘোষ ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর ভাটারার নূরেরচালা এলাকায় বাস করতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনার ধর্মপুর গ্রামে। সজলের স্ত্রী বলেন, সজল ১০ বছর ধরে কালাম হোসেনের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। তিনি সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন দুপুরের দিকে সজলের সঙ্গে তাঁর (স্ত্রীর) মুঠোফোনে একবার কথা হয়। এরপর তাঁকে আর ফোনে পাননি।

জয়া রানী আরও জানান, সজলের মুঠোফোন সচল ছিল। কিন্তু কল কেউ ধরছিল না। পরে তিনি ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকেও সজলের বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি।

গাড়ির মালিক কালাম হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর সজল তাঁকে মহাখালী থেকে ধানমন্ডিতে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে মহাখালীতে ইউডিসির কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর থেকেই সজল নিখোঁজ। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার বিকেলে তিনি ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরামুল মিয়া বলেন, জিডির তদন্তে নেমে দেখা যায় সজলের মুঠোফোন সচল। মুঠোফোনের অবস্থান শনাক্ত করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় গিয়ে গাড়িটি পাওয়া যায়। দরজা খুলে দেখা যায়, চালক বসার পেছনের আসনে সজলের অর্ধগলিত লাশ। ঘটনাস্থল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এলাকায় হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। 

সজল খুবই ভালো একজন কর্মী ছিলেন বলে উল্লেখ করেন গাড়িটির মালিক কালাম হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ বা শত্রুতা আছে, এমন কোনো বিষয় তিনি জানেন না।

অবশ্য সজলের স্ত্রী জয়া রানী ঘোষের দাবি, কর্মস্থলে সজলের অনেক শত্রু রয়েছে বলে তিনি বিভিন্ন সময় বলতেন। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে বের হওয়ার সময় উনি অনেক সময় বলতেন, “আমি না-ও ফিরতে পারি। আমার ছেলেমেয়েকে দেখে রেখো।” তবে কার সঙ্গে শত্রুতা, কী নিয়ে শত্রুতা, এ বিষয়ে তিনি কখনো কিছু বলেননি।’

জয়া রানী আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, “তোমার এগুলো জেনে লাভ নেই”। কখনো কখনো রেগেও যেতেন।’ সূত্র: প্রথম আলো