প্রধানমন্ত্রীর আঁকা সেই ছবি কোথায়?

ফানাম নিউজ
  ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৩:৪৩

২০১৮ সালে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রকর্ম উদ্বোধন করতে গিয়ে শিল্পীর সঙ্গে একটি ছবি যৌথভাবে আঁকেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেটি শিল্পকলা একাডেমির ফাইন আর্টস বিভাগের পরিচালক শিল্পী আশরাফুল আলম পপলুর কক্ষে সংরক্ষিত ছিল। ২০২০ সালে পরিচালক হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়। তাকে একাডেমিক শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগে পাঠানো হলে চিত্রকর্মটি নিয়ে যান তিনি। এরপর বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর আঁকা সেই ছবি না পেয়ে প্রশ্ন ওঠে চিত্রকর্মটি এখন কোথায়?

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে একাডেমি থেকে একটি চিঠি ইস্যু করে ছবিটি ফেরত দিতে বলা হয়। চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সে বছরই ১১ মার্চ চিঠির দীর্ঘ জবাব দেন আশরাফুল আলম পপলু। তিনি ছবিটি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন এবং এটি মন্ত্রণালয় যেখানে উপস্থাপন করতে বলবে সেখানে তিনি দেবেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ছবিটি আমার নয়, শিল্পকলারও নয়। কাজটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করানো হয়েছিল। পরে ২৪ জুন শিল্পকলা আবারও ছবির বিষয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে, যেখানে দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী সেলের সহকারী সংগঠক তৈমুর হান্নানের কাছে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়।

আশরাফুল আলম পপলু কী বলছেন

ছবিটি চেয়ে একাডেমির দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পপলু যে চিঠি দেন সেখানে উল্লেখ করেন, চিত্রকর্মটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে এঁকেছিলেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। যার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। চিত্রকর্মটিতে এখনও শিল্পী শাহাবুদ্দিনের স্বাক্ষর হয়নি। শিল্পী শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তার স্বাক্ষর প্রদান এবং এটি সংরক্ষণ কোথায় করা হবে সেই বিষয়ক পরামর্শ করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে এবং তাদের পরামর্শও রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পীর প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন সরকারপ্রধান। আমি নিজের মতো করে চিন্তা করলাম, আলাদা ক্যানভাস করলাম। টুল বানালাম উনার স্ট্যান্ডার্ডে। প্রদর্শনীর বাইরের আয়োজন সেটি। আমি দরজার আগে ক্যানভাস তুলি দিয়ে রেখে দিয়েছি। সেটাতে একটা আঁচড় দেবেন অনুরোধ জানালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমি কি ছবি আঁকতে পারি? এরপর তুলি দিয়ে আঁচড় দেন বেশ কয়েকটা। পরে শিল্পী শাহাবুদ্দিন ভাইও তুলি নিয়ে কয়েকটা আঁচড় দেন।’

ছবিটা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সংগ্রহেই সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত আছে। আমি চিঠি দিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেয় সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি চাই অমূল্য জিনিসটি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামাফিক স্থানে দেওয়া হবে। যথাযথ স্থানে উপস্থাপন হবে।’

বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন কী বলছেন

বিশিষ্ট শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রবাসে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে একবারও বলা হয়নি পপলু এটা নিজের কাছে রাখতে চায়। বললেই হতো এটা সে নেবে। কাজটা তো শেষ হয়নি। উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আঁকলেন, আমি কয়েকটা টান দিলাম। তারপর বললাম, রেখে দাও। আমি সময় করে কাজটা শেষ করবো। পপলু আমার ভীষণ প্রিয়। আমাকে বললেই হতো। এখন এটা নিয়ে আবার কী কী যেন হচ্ছে। এগুলো আমার কাছে একেবারেই ব্যাপার না।’

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ছবিটার বেশি অংশ আপা এঁকেছেন। চারপাশে এত ভিড়ভাট্টা, ক্যামেরা। তাঁর তো এসবে কিছু এসে যায় না। আমার অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি বলেছিলাম, এটা কালেকশনে অন্তর্ভুক্ত হলে কাজটাতে টাচ দিয়ে দেবো।’ এটা অমূল্য সম্পদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক ইসলামি দেশ আছে। কোথায়ও একজন নারী নেত্রী ছবি আঁকেন? সেসব জায়গায় ছবি আঁকাই নিষেধ। তিনি নারী, প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার প্রগতিশীল অন্তর থেকে আসা বিষয় এটা। এর মূল্য হয়?’

সময় দেননি মহাপরিচালক

চিত্রকর্মটি কোথায় আছে জানার জন্য শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি। বুধবার (৬ অক্টোবর) একাডেমির জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে মহাপরিচালকের মন্তব্য চাইলে তিনি জানান, ‘স্যারের সঙ্গে কথা বলে সময় জানাবেন’। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত টেলিফোনে সাড়া না পেয়ে বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমিতে মহাপরিচালকের দফতরে গিয়ে অপেক্ষা করেও সাক্ষাৎ মেলেনি। বিষয় জানিয়ে এক মিনিটের জন্য সাক্ষাৎ চাওয়া হলেও ‘এখন হবে না’ জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে নানা ইস্যুতে বিতর্কিত ফাইন আর্ট পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিমের (মিনি করিম) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই। ও (আশরাফুল আলম পপলু) নিজে ভালো জানে কী করতে হবে। কারণ, আমরা সবাই শিল্পী।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন