শিরোনাম
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এ অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি।
সিটিটিসি জানায়, ডা. শফিকুর রহমানের সিলেটের বাসায় ডা. রাফাত ও তার অন্যান্য সহযোগীরা বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতেন। যার পুরো বিষয় জামায়াত আমির অবগত ছিলেন। ক্ষেত্রবিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন।
সিটিটিসি আরও জানায়, জামায়াতের আমিরের ছেলে গ্রেফতার ডা. রাফাত ১১ জনকে নিয়ে পাহাড়ী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টে (কেএনএফ) প্রশিক্ষণের জন্য হিজরত করেছিল। সেই হিজরতের সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছিলেন শফিকুর রহমান।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৯ নভেম্বর তার ছেলে ডা. রাফাত চৌধুরীকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারও আগে হিজরত করা অবস্থায় যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। ডা. রাফাতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাফাত আগে ইসলামী ছাত্রশিবির করতেন। এছাড়া তার আগের তিনজন সহকারীও ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলেন। ডা. রাফাতের সঙ্গে গ্রেফতার আরিফও শিবিরের সদস্য ছিলেন।’
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ‘জামায়াত আমিরের ছেলে ডা. রাফাতকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, জামাতুল ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার আগে তিনি আনসার আল ইসলামে উদ্বুদ্ধ হন এবং নিষিদ্ধঘোষিত এ জঙ্গি সংগঠনটিতে যোগ দেন। সিলেট অঞ্চলে কাজ করার সময় ডা. রাফাত অনেককে আনসার আল ইসলামে যোগ দেওয়াতে সক্ষম হন। পরে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল হিন্দাল ফিল শারক্বীয়াতে ডা. রাফাতসহ তার সদস্যরা যোগদান করেন।’
তিনি বলেন, ‘ডা. রাফাতের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম সিলেট অঞ্চল থেকে ১১ জন বান্দরবানের কুকি-চিনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হিজরত করেন। বান্দরবানে কুকি-চিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে পাহাড় থেকে ফিরে আসেন তারা। পরে ডা. রাফাতের কয়েকজন সহকারী তাহিয়াতের নেতৃত্বে হিজরত করেন। তাহিয়াত কুকি-চিন ক্যাম্পের সর্বশেষ প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিলেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০২১ সালের জুনে ডা. রাফাতসহ তার কয়েকজন সহকারী তার বাবা জামায়াত আমিরের সম্মতিক্রমে বান্দরবান থেকে ফেরত আসেন। জামায়াত আমির তাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পুলিশের নজর এড়াতে দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দেন। সেখান থেকে কয়েকজন ঢাকায় এবং কয়েকজন সিলেট অঞ্চলে চলে যায়। বান্দরবানে হিজরতের ১১ জনের সম্পূর্ণ ব্যয়ভার ডা. শফিক বহন করেন। সেই কানেকশনেই জামায়াতের আমিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সরাসরি সম্পৃক্ততার কারণে ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।’
‘নতুন জঙ্গি সংগঠনের আরেকজন চিকিৎসক ডা. শাকিরকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগের প্রধান ছিলেন’ বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।
জামায়াত নেতারা জঙ্গিবাদকে উদ্বুদ্ধ করছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। জামায়াতের সঙ্গে নতুন জঙ্গি সংগঠনের পরস্পর বোঝাপড়া থাকতে পারে অথবা তাদের সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতাও করতে পারে। নতুন জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা জামায়াতের কাছ থেকেও সহযোগিতা পেয়েছেন।’
জামায়াতের আমির ছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আর কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ড. রাফাতের নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তিনি প্রথম হিজরতকারী এবং তার নেতৃত্বে একটি বড়সংখ্যক সদস্য একযোগে হিজরত করেছিলেন। যে সংগঠনের প্রধানের ছেলে প্রশিক্ষণ নিতে হিজরত করেন, সেই সংগঠনের অন্যান্য আঞ্চলিকপর্যায়ের সমর্থন আছে বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি।’
এদিকে, ডা. শফিকুর রহমানের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর যাত্রাবাড়ী থানার সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
অন্যদিকে তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।