কেউ কি আজও চিঠি লিখেন রাত জেগে?

ফানাম নিউজ
  ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১৯:১১

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও/খামে ভরে তুলে দিও আঙ্গুলের মিহিন সেলাই/ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও/এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতো/অক্ষরের পাড় বোনা একখানি চিঠি’।  

কবি মহাদেব সাহার এমন আকুতির কথা স্মরণ করে কেউ কি আজও চিঠি লিখেন রাত জেগে? গ্রামের কোনও বধূ আজও কি তার স্বামীর পাঠানো চিঠি পেতে ব্যাকুল হয়ে ডাকপিয়নের পথ চেয়ে অপেক্ষা করেন? কোনও মা-বাবা সন্তানের ভালো-মন্দের খবর জানাতে চিঠি লিখতে বলেন?  এক কথায় না।

কারণ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইভার, ইমো, গুগল ডুয়োসহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগের সময় এখন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও ই-মেইলের মতো উন্নত প্রযুক্তির কারণে হারিয়ে গেছে চিঠি লেখার দিনগুলো। কমেছে ডাকঘরের রানারদের ব্যস্ততাও। তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে সহজে কেউ যেতে চান না ডাকঘরে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অফিসিয়াল চিঠি ও জরুরি কাগজপত্রসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহন সংস্থা।

এমন বাস্তবতায় শনিবার (৯ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডাক দিবস। ১৮৭৪ সালের এই দিনে সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে বিশ্ব ডাক সংস্থার (ইউপিইউ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে স্মরণ করে প্রতি বছর ৯ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় দিনটি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। এই প্রতিষ্ঠান দেশিয় ও আন্তর্জাতিক ডাক দ্রব্যাদি গ্রহণ, পরিবহন ও বিলি করা, রেজিস্ট্রেশন সেবা, ভ্যালু পেয়েবল (ভিপি) সেবা, বীমা সেবা, পার্সেল সেবা, বুক পোস্ট (বুক প্যাকেট ও প্যাটার্ণ প্যাকেট), রেজিস্টার্ড সংবাদপত্র, মানি অর্ডার সেবা, জিইপি ও ইএমএস সেবা, ই-পোস্ট ও ইন্টেল পোস্ট সেবা দিয়ে থাকে।

এক যুগ আগেও বেশ কদর ছিল ডাক বিভাগের। সাইকেল চালিয়ে ডাকবাহক ছুটে যেতেন শহর আর গ্রামের বাসা-বাড়িতে। পল্লীবধূ অপেক্ষায় থাকতেন স্বামীর পাঠানো চিঠির জন্য। মা-বাবা আর সন্তানের যোগাযোগ হতো ডাকে পাঠানো চিঠিতেই। প্রবাসীরা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাখতেন পরিবার-পরিজনের খবর।

কারও চিঠি এলে খাম ছিঁড়ে কয়েকবার পড়া, তারপর শুরু হতো উত্তর লেখার প্রস্তুতি। ডাকঘরে গিয়ে হলুদ রঙের খামের ভেতর ভাঁজ করে চিঠি দেওয়া, আঠা লাগিয়ে খামের মুখ আটকে ডাকবাক্সে ফেলার পর মিলতো স্বস্তি। এরপর চলতো আবার প্রতিউত্তরের অপেক্ষা। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে হারিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে চিঠি লেখার অভ্যাস।

ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়। এটির অধীনে একটি জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস) ও ৬টি ‘এ’ গ্রেড প্রধান ডাকঘর এবং ১১টি ‘বি’গ্রেড ডাকঘর রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের গ্রামীণ ৩০৪টি ডাকঘরের মধ্যে ২৫৪টিকে পোস্ট ই-সেন্টারের আওতায় আনা হয়েছে।  

সরেজমিন নগরের জিপিও ও কয়েকটি শাখা ডাকঘর ঘুরে দেখা গেছে, চিঠিপত্র আদান-প্রদানের জন্য মানুষের আনাগোনা অনেক কম। চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদনপত্র পাঠাতে আর গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান কার্ড পাঠাতে আসেন এসব ডাকঘরে।

জিপিওতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব জায়েদুল করিম বলেন, ডাক বিভাগের প্রতি মানুষের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। কুরিয়ারে অনেক দ্রুত চিঠি পাঠানো যায়। কিন্তু সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহ করা চিঠি গ্রহণ করতে চায় না। তাই ডাকঘরে আসতে হয়।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হায়দার আলী বলেন, চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগে যে আবেগ, অনুভূতি ছিল তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সেই আবেগ হারিয়ে যাচ্ছে।

নগরে কর্মরত কয়েকজন ডাকবাহক জানান, আগের মতো তেমন চাপ নেই গাদাগাদা চিঠি পৌঁছে দেওয়ার। অথচ একসময় চিঠি বিলি করতে গিয়ে রোদে পুড়তে হয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছেন। খাবার সময়ও পাননি ঠিকমতো।

পোস্টমাস্টার জেনারেল কার্যালয় (পূর্বাঞ্চল) এর অতিরিক্ত পোস্টমাস্টার জেনারেল মো. আমিনুর রহমান  বলেন, ডাক বিভাগের প্রতি এখনও মানুষের আস্থা আছে। ডাকসেবা এখন অনেক আধুনিক। পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমেও গ্রাহকরা সেবা পাচ্ছেন।

সূত্র: বাংলানিউজ