শিরোনাম
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়ন বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে কনস্যুলার সেবা কিংবা পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা নিতে আসলেও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক। এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত কর্মীদের এখন থেকে দূতাবাসের সেবা নিতে হলে বোর্ডের সদস্য হতে হবে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের অনেকেই বিএমইটি'র ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড (স্মার্ট কার্ড) নিয়ে যাননি কিংবা ওখানে গিয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা হননি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশে অবস্থানরত কর্মীদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানোর জন্য মিশনগুলোর শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও কয়েকটি মিশন ব্যতীত অন্যান্য মিশনের কার্যক্রম আশাব্যাঞ্জক পাওয়া যায়নি। বিএমইটি'র ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড (স্মার্ট কার্ড) গ্রহণ এবং বিদেশে অবস্থানরত ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড (স্মার্ট কার্ড) বিহীন কর্মীদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণের বিপরীতে প্রাপ্ত চাঁদা কল্যাণ বোর্ডের তহবিল গঠনের অন্যতম উপায়। এই তহবিল থেকেই বিভিন্ন মিশনের শ্রম কল্যাণ উইং এ প্রবাসী কর্মীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে রাজস্ব বাজেটের অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া, বিদেশ প্রত্যাগত কর্মী, বিদেশে মৃত কর্মীর পরিবার, প্রবাসী কর্মীর সন্তান-সন্ততিদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কার্যক্রম এবং বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশির সন্তানদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় ভর্তুকি প্রদান বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয় এই তহবিল থেকে।
মন্ত্রণালয় মনে করে, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী এবং অনিবাসী বাংলাদেশি যারা কোনও না কোনোভাবে শ্রম কল্যাণ উইংয়ের সেবা গ্রহণ করেন বা যাদের গ্রহণ করার সম্ভাবনা আছে, তাদের কাছে বিএমইটি'র ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স কার্ড (স্মার্ট কার্ড) না থাকলে তাদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণ শুধু সমীচীন নয়, লাভজনকও। তাই সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তি হওয়ার পর কর্মীরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।
আগে বিদেশে যাওয়ার পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য হওয়ার সুযোগ ছিল না। ২০১৭ সাল থেকে বিদেশেই সাড়ে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে সদস্যপদ লাভের জন্য সুযোগ দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। তবে এতেও খুব বেশি একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী কর্মীরা পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের আবেদন এবং অন্যান্য কনস্যুলার সেবা গ্রহণের জন্য নিয়মিত মিশনে যাতায়াত করেন। সেই সেবা প্রদানের সময় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হলে সদস্যপদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ রেহান উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনায় বলা হয়, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারণাসহ প্রবাসী কর্মীগণ কর্তৃক পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের আবেদন এবং অন্যান্য কনস্যুলার সেবা গ্রহণের সময়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ডের সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আরব আমিরাত সফর করে এসেছেন। সেখানে পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান আল ওয়াফা গ্রুপ এবং পারফিউম প্রস্তুতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান আল হারামাইন গ্রুপ অব কোম্পানি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি কর্মীদের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করতে গিয়ে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা সে বিষয়টিও জানার চেষ্টা করেন। মন্ত্রী সরকারি সুযোগসুবিধা প্রদানের সুবিধার্থে প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদেরকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদ গ্রহণ করে সরকারি সেবার অংশীদার হওয়া এবং বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর অনুরোধ জানান।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আল ওয়াফা গ্রুপ ও আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যানরা কোম্পানির নিজস্ব খরচে তাদের কোম্পানিতে কর্মরত প্রায় কয়েক হাজার কর্মীদের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্যপদের ব্যবস্থা এবং তাদের কর্মীদেরকে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করবেন বলে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, যেসব বাংলাদেশি কর্মী ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সদস্য, যাদের আমরা সুবিধা দেই- তার সংখ্যা বর্তমানে লাখের কাছাকাছি। আর বিদেশে আমাদের কর্মী আছে কোটির ওপরে। আমাদের এখন যেসব ফান্ড দিতে হচ্ছে, আমরা একজনের সদস্যপদের টাকা ১০ জনের মাঝে বিতরণ করছি। একজন কর্মীর সদস্য হতে সাড়ে ৩ হাজার দিতে হয়। এটাই বোর্ডের পুঁজি। যে লাখের কাছকাছি সদস্য আছে তাদের দেওয়া টাকায় আমরা কোটি কর্মীকে সেবা দিচ্ছি। সুতরাং সবাইকে এই ফান্ডের অংশীদার হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ না করুক- বিদেশে কোনও কর্মীর মৃত্যু হলে তার লাশ আসলে আমরা ৩৫ হাজার টাকা দেই; দাফন খরচ বাবদ। এরপর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা তার পরিবারকে দেওয়া হয়। এই সেবা গ্রহণ বা বিদেশে মিশনে পাসপোর্ট রিনিউ কিংবা কনস্যুলার সেবা নিতে আসাদেরও আমরা সদস্য হওয়ার জন্য বলছি।