কিউকম প্রতারণা: মানুষকে আকৃষ্ট করাই ছিল আরজে নিরবের কাজ

ফানাম নিউজ
  ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৮:১২
আপডেট  : ০৮ অক্টোবর ২০২১, ১৮:৪৯

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে দেশে তোলপাড়ের মধ্যেই আলোচনায় আসে আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রিপন মিয়ার পর এবার কিউকমের হুয়ামূন কবির নিরব ওরফে আরজে (রেডিও জকি) নিরবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। 

আরজে  নিরব কিউকমের হেড অব সেলস (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) অফিসার পদে কাজ করেন। তার কাজই ছিল সাধারণ মানুষদের আকৃষ্ট করা। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও তিনি কিউকম নিয়ে নানা প্রচারণা চালান।  গত ২৪ আগস্ট কিউকম নিয়ে একটি নিউজ শেয়ার দেন। সেখানে নিরব লিখেন, ‘পুরো দেশ আর সারা দুনিয়া জুড়ে কিউকম ছড়াতে চাই, ইনশাআল্লাহ’ ‘৮ বিভাগে নিজস্ব ডেলিভারি পয়েন্ট, ওয়ারহাউজ, কাস্টমার কেয়ার চালু করবে কিউকম’- নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এমন অনেক স্ট্যাটাস আর নিউজের মাধ্যমে কাস্টমারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আরজে নিরব।

কিউকমের প্রতারণার বিষয়টিও সামনে আসার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর নিরব তার ফেসবুকে লেখেন, মনে হয় এই শিল্পটা বন্ধ না করে কেউ থামবে না। একজন সৎ কর্মচারী হিসেবে বিপদের দিনে মালিকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম, যেন গ্রাহক তার টাকাটা ফেরত পায়। সঠিক ভাবে গুছিয়ে কাজ করতে পারলে হয়তো তা সম্ভবও। কিন্তু মনে হচ্ছে, আপনারা যদি পণ করে বসেছেন চাকরিটা না ছাড়া পর্যন্ত আমার পিছু ছাড়বেন না! তবে তাই হোক!

কিউকমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগের চেষ্টা করায় সাংবাদিকদের তাচ্ছিল্য করে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন নিরব। নিরবকে গ্রেফতারের পর তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এক ভোক্তভোগী তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় আরজে নিরবের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে শুক্রবার ভোররাতে আদাবর থানা এলাকার নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে আরজে নিরবকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ বলছে, কিউকমের প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড হুমায়ূন কবির নিরব ওরফে আরজে নিরব। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল মাধ্যমে কিউকম সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। আর তার কথায় বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষ লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পথে বসেছেন। জানা গেছে, এর আগে পল্টন থানার একটি প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় কিউকমের সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, এর আগে পল্টন থানার একটি প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় কিউকমের সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

রিপন মিয়াকে গ্রেফতারের পর সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, রিপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- কিউকম প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করে পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্রান্ডিং করার জন্য তারা ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম লোভনীয় দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। বাজারে যেই মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিত। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগে। এক্ষেত্রে রিপন মিয়া আরও জানায়, সে মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা চেক দিয়ে দিত গ্রাহকদের। 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমরা জানি যে বাংলাদেশ ব্যাংক জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু করে। তৃৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে। পণ্য ডেলিভারির পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া ডিবি পুলিশের কাছে দাবি করেন। এ ছাড়া রিপন মিয়া গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির আরও ২৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেন ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার। 

সূত্রঃ যুগান্তর