শিরোনাম
মহামারি করোনার প্রকোপ কমতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে ধেয়ে আসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট। এ সংকটে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে জ্বালানি ও খাদ্য খাতে। সারাবিশ্বে হু হু করে বেড়েছে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এ অবস্থায় রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি তেল আমদানি করবে কি না তা নিয়ে চলছে আলোচনা। যদি বাংলাদেশের জন্য রাশিয়ার তেল উপযুক্ত হয়, তবে কম দামে ওই তেল কেনার প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারে সরকার।
এ বিষয়ে কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) দায়িত্ব দিয়েছে জ্বালানি ও খণিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে রাশিয়া থেকে আসা ৫০ লিটার তেলের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে জানা গেছে, রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে ব্যবহারের উপযোগী করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটু ভুল হলেই বড় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল ব্যবহারকারী সব যানবাহনের ইঞ্জিন ও মেশিনারিজ পড়তে পারে ক্ষতির মুখে। নষ্ট হতে পারে পরিবেশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, রাশিয়ার তেল হচ্ছে ‘হেভি অয়েল’। আমাদের ইস্টার্ন রিফাইনারি যে মেকানিজমে অ্যারাবিয়ান লাইট অয়েল পরিশোধন করে, সেখানে রাশিয়ার তেল রিফাইন (পরিশোধন) সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমেরিকা-ইউরোপের যে নীতি আছে, তার বাইরে গিয়ে রাশিয়া নিজেদের মতো করে তেল বিক্রি করে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমেরিকা-ইউরোপের সঙ্গে আমাদের যে বড় বাজার রয়েছে, তার ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।
বিকল্প পন্থা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ভারত যেহেতেু রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে পরিশোধন করছে, আমরা চাইলে ভারতের কাছ থেকে পরিশোধন করা তেল নিয়ে আসতে পারি। এতে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ছাড়াই তেল ব্যবহার করতে পারবো।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সহযোগী অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম। বাংলাদেশের তেল-গ্যাস নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা করছেন তিনি।
ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, রাশিয়ান ক্রুড অয়েল রয়েছে আট ধরনের। সেগুলো হলো- ইএসপিও, সকোল, শাখালিক ব্লেন্ড, নোভি পোর্ট, সাইবেরিয়ান লাইট, ইউর্যালস ব্লেন্ড, অ্যারকো এবং ভ্যারানডে। এই আট ধরনের তেলকে আবার সোর, লাইট, হেভি এবং সুইট- এই চারভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে লাইট ও সুইট- এই ধরনের তেল বাংলাদেশের কিনতে হবে। যদি সোর ও হেভি অয়েল কেনা হয় তবে আমাদের দেশের সব গাড়ির ইঞ্জিন এবং যন্ত্রপাতি করোশন হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। এখন এই দুই ধরনের তেল নির্বাচনে কতটা দক্ষতা দেখাতে পারবো সেটাই প্রশ্ন।
রিফাইনারি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে রিফাইনারি আছে সেটি ম্যানুয়াল। এই ম্যানুয়াল রিফাইনারিতে রাশিয়ার তেল মোডিফিকেশন সম্ভব নয়। ফলে পুরোটা সেটআপ করতে হলে নতুন রিফাইনারি তৈরির মতোই খরচ পড়বে। যদি মোডিফিকেশন করতে হয় তবে আমাদের ভাবতে হবে, রাশিয়া আমাদের যে তেল দেবে, সেটি দীর্ঘমেয়াদি কি না। তাদের প্রতিকূলতা কেটে গেলে বা যুদ্ধ বন্ধ হলে তেল দেবে কি না। যদি সেটা দীর্ঘমেয়াদি হয় কিংবা যে দামে তেল দেওয়ার প্রস্তাব তারা দিয়েছে সে দামটাই ঠিক রাখে, তবেই আমাদের বাজেট করা অর্থ কাজে লাগবে। যদি রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে আসে, তবে আমাদের বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের তেল পরিশোধন করতে করতে আমাদের রিফাইনারির কর্মীরা দক্ষ হয়েছেন। তাদের রাশিয়ার তেল নতুন করে পরিশোধন করতে হলে সেটি শিখতেও বছর দুয়েক সময় লাগবে।
সূত্র: জাগো নিউজ