শিরোনাম
কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া।
গত রাতে ডিএসই চেয়ারম্যানের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। অক্টোবরের শেষে তার পদত্যাগ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে পদত্যাগপত্রে। ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল সোমবার ডিএসই থেকে ১২৭ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে জিএম থেকে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে দুজন, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) থেকে জিএম পদে তিনজন, অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) থেকে ডিজিএম পদে তিনজন, সিনিয়র ম্যানেজার থেকে এজিএম পদে ১৯ জন, ম্যানেজার থেকে সিনিয়র ম্যানেজার পদে ১৫ জন, ডেপুটি ম্যানেজার থেকে ম্যানেজার পদে ২৯ জন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ২৯ জন ও এক্সিকিউটিভ থেকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে ১০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জুনিয়র এক্সিকিউটিভ থেকে এক্সিকিউটিভ পদে ছয়জন, সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে জুনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে একজন, অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে সিনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে দুজন, জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একজন ও জিএসএস থেকে জুনিয়র অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ছয়জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এ পদোন্নতি দিয়ে বিতর্কের মধ্যে পড়েন ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া। অভিযোগ ওঠে, নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটিকে (এনআরসি) বাদ দিয়ে এমডি একক সিদ্ধান্তে তিন কর্মকর্তাকে ডিজিএম থেকে জিএম করেছেন। ডিএসইর নিয়ম অনুসারে ডিজিএম পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে এনআরসির সুপারিশ লাগে। কমিটি যাচাইবাছাই করে পদোন্নতির সুপারিশ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমন পদোন্নতি দেওয়ায় গতকাল সোমবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়াকে তোপের মুখে পড়তে হয়। এমনকি, পর্ষদ সভার একপর্যায়ে তাকে সভায় না রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে এমডির অনুপস্থিতেই পর্ষদ সভার বাকি অংশ অনুষ্ঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে একদিন না যেতেই পদত্যাগপত্র জমা দেন ডিএসইর এমডি।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ডিএসইর এমডি তারেক আমিন ভূঁইয়া যেভাবে চাচ্ছিলেন, সেভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। আবার ডিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ বিভিন্নভাবে তাকে অসহযোগিতা করছিলেন।
এমনকি পরিচালনা পর্ষদের একটি অংশ থেকেই বিভিন্নভাবে তারেক আমিন ভূঁইয়ার ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল। সব কিছু মিলেই পদত্যাগপত্র জমা দিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছেন তারেক আমিন ভূঁইয়া।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারেক আমিন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।
আর ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এমডি আজ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এতে তিনি অক্টোবরের শেষে পদত্যাগের কথা বলেছেন।
এমডি কেন পদত্যাগ করলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, তিনি পদত্যাগ করেছেন অনেকটাই ব্যক্তিগত কারণে। হয়তো তিনি এখানে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছিলেন না। হয়তো তিনি যেভাবে কাজ করতে চাচ্ছেন, সেভাবে পারছেন না। এসব কারণে তিনি মনে করেছেন, পদত্যাগ যৌক্তিক। তবে আমরা তাকে পদত্যাগ করতে বলিনি।
এখন কী এমডির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি তার পদত্যাগপত্র পেয়েছি। বিষয়টি আমরা বোর্ডে পর্যালোচনা করবো। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোমবার বোর্ড সভায় একটি অংশ এমডিকে না রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বোর্ড সভায় এমডি ছিলেন। তবে সভার একটি অংশে তিনি ছিলেন না। কারও বিষয়ে সমালোচনা তার সামনে করলে সেটা খারাপ দেখায়। ওই অংশে তিনি ছিলেন না। পরবর্তীতে সভার মূল আলোচনা এমডিকে জানানো হয়।
ডিএসইর কর্মকর্তাদের যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এখন তার কী হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিএসইর নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতির একটি অংশ এমডির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। এ জায়গাটুকু পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। আর বাকিগুলোর মধ্যে অর্গানোগ্রামে পদ নেই, তবুও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে।
গত বছরের জুলাই মাসে তিন বছরের জন্য ডিএসইর এমডি হিসেবে নিয়োগ পান অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তারিক আমিন ভূঁইয়া। দায়িত্ব পাওয়ার এক বছরের মাথায় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
সূত্র: জাগো নিউজ