শিরোনাম
সিলেটে পর্যটনখাতে প্রতিদিন প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। করোনার পর বন্যা, এরপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। ফলে সিলেটে পর্যটক নেই বললেই চলে। অথচ এ সময় হাজারও পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত থাকতো আধ্যাত্মিক রাজধানী সিলেট। বন্যার কথা যেভাবে প্রচার হয়েছিল, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর এভাবে প্রচারণা না হওয়ায় অনেকে মনে করছেন সিলেট এখন পানির নিচে।
প্রকৃতপক্ষে বন্যা চলে গেলেও তার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সেক্টরে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দুই বছর পর গত ঈদুল ফিতরে সিলেটে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের ঢল নেমেছিল। ঈদের ছুটিতে পর্যটনখাতের ব্যবসাও ভালো হয়েছিল। কিন্তু ঈদুল ফিতরের পরপর সিলেটজুড়ে দুদফা বন্যা হওয়ায় মারাত্মক ধস নেমেছে পর্যটনখাতে। বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে হোটেল-মোটেল ও পর্যটনশিল্প। বন্যার কারণে ঈদের ছুটিতে পর্যটকশূন্য ছিল সিলেটের সবকটি পর্যটনকেন্দ্র। এ পরিস্থিতিতে পর্যটনখাতের দুর্দিন যাচ্ছে বলে ব্যবসায়িক নেতারা জানিয়েছেন। অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলং এলাকা ঈদের দিন থেকে রোববার পর্যন্ত পর্যটকশূন্য ছিল। মাত্র কয়েকশ পর্যটক বেড়াতে গিয়েছিলেন জাফলং ও রাতারগুলে। পর্যটন এলাকায় অন্যবার এমন সময়ে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকত। পুরো জাফলং, সাদাপাথর, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পান্তুমাই, লালাখালসহ বিভিন্ন চা বাগানে বিরাজ করত উৎসবের আমেজ। কিন্তু ঠিক তার বিপরীত চিত্র এবার। পর্যটক না আসায় সিলেটের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বিশেষ করে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বেশি হতাশ হয়েছেন। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে ঈদের আগেই অনেকে হোটেল-মোটেল সংস্কার করে রেখেছিলেন। অনেক হোটেলের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বিশেষ অফারও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার কারণে পর্যটকরা না আসায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
একই অবস্থা পরিবহণ ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ও। পর্যটক সমাগম হলে সিলেটের রেস্টুরেন্ট ও রেন্ট-এ কার ব্যবসা জমে উঠে। অনেকে কেবলমাত্র পর্যটকদের আশায় ঈদের ছুটিতে রেস্টুরেন্ট খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু পর্যটক না আসায় তাদের লোকসানের বোঝা যুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিভাবে এ লোকসানের হাত থেকে রেহাই পাব বুঝে উঠতে পারছি না। অনেক হোটেল-মোটেলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ধার দেনা করে পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সিলেট হোটেল-মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ অনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সিলেটে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪শ আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে। ঈদ কিংবা যে কোনো উৎসবের ছুটিতে এসব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ পর্যটকে হাউজফুল থাকে। গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অনেক পর্যটক সিলেটে বেড়াতে এসে হোটেলে সিটই পাননি। কিন্তু এবার বেশিরভাগ হোটেল ছিল খালি। যেখানে ঈদের ছুটিতে লাখো পর্যটক সমাগম হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এসেছেন মাত্র কয়েকশ পর্যটক।
সিলেট হোটেল-মোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিদ আহমদ জানান, এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে সিলেটে পর্যটকদের কোনো সমাগম হয়নি। বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল খালি ছিল। এবারের বন্যায় অবকাঠামোসহ সব কিছু ধ্বংস করে গেছে। হোটেলের আন্ডারগ্রাউন্ডে পানি ঢুকে পড়ায় অনেক কিছু বিকল হয়ে গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হোটেল রেস্তোরাঁ। এক মিনিটের ব্যবধানে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে সাবস্টেশনের সঙ্গে সংযোগকৃত জেনারেটরে এসি, মোটরসহ প্রত্যেকটি জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর জন্য তিনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বলেন, সরকার সহযোগিতা না দিলে সব ব্যবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, অল্প বৃষ্টি হলেই নগরীতে জলজট দেখা দেয়। রাস্তা থেকে হোটেলগুলোর আন্ডারগ্রাউন্ড নিচু হওয়ায় ও ড্রেনের ওয়াটার লেভেল টিক না থাকায় পানি ঢুকে লিফটসহ সব কিছু পানিতে নষ্ট হয়ে যায়।
হোটেল গোল্ডেন সিটির জিএম মৃদুল কান্তি দত্ত বলেন, এবারের বন্যা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। সিলেটকে পর্যটকশূন্য করে দিয়েছে। পর্যটনখাতে জড়িত ব্যবসায়ীরা চোখে সর্ষের ফুল দেখছেন। বন্যার পানি নেমে গেলেও অনেকে মনে করছে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ। এসব নানাবিধ কারণে পর্যটকরা আসছেন না। ফলে এই খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
সূত্র: যুগান্তর