শিরোনাম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি করা হয় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে। আজ এ মামলার দুই বছর পূর্ণ হলো, কিন্তু এখনও শেষ হয়নি বিচারিক কার্যক্রম। এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ।
আবরার হত্যা মামলাটি বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর এ মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য গত বছর আমাদের আদালতে পাঠানো হয়। আমরাও সেভাবে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিচার কার্যক্রমে দেরি হয়ে যায়। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলাটির দিন ধার্য আছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আশা করছি, সবকিছু ঠিক থাকলে অতিদ্রুত মামলাটির রায় হবে। আমরা আশা করি, এই মামলার প্রত্যেক আসামি সর্বোচ্চ সাজা পাবে।’
এ বিষয়ে আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে দুই দফায় আদালত বন্ধ ছিল। এখন আবার বিচারক করোনায় আক্রান্ত। যাই হোক, এখন যেন বিচার কাজে বিলম্ব না হয় সেই প্রত্যাশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে মারা গেলো দুই বছর হলো। তাও যেন কষ্ট কোনোভাবেই কমছে না। যত দিন যাচ্ছে, ছেলের কথা তত বেশি মনে পড়ছে। আমরা আশা করি, ছেলে হত্যা মামলাটির বিচার কার্যক্রম যেন দ্রুত শেষ হয় এবং রায়ে আসামিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।’
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে আবরার হত্যা মামলটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বিচারক অসুস্থ হয়ে ছুটিতে থাকায় লম্বা সময় পর দিন পড়েছে পরবর্তী শুনানির জন্য। আমরাও চাই, মামলাটির দ্রুত বিচার কাজ শেষ হোক। আসামিপক্ষ চাই ন্যায়বিচার। আমরা চাই, আসামিদের মধ্যে যারা দোষী শুধু যেন তারা সাজা পায়। আর যারা নির্দোষ তারা যেন মুক্তি পায়।’
এর আগে ১৪ মার্চ ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
মামলায় মোট ৪৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গত বছরের জানুয়ারিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দেন। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানোর আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগপত্রে ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরও ৬ জনের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন এবং এজাহারের বাইরে থাকা ৬ জনের মধ্যে ৫ জনসহ মোট ২২ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। পলাতক রয়েছেন ৩ জন। অভিযোগপত্রে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয় এবং ২১টি আলামত ও ৮টি জব্দ তালিকা আদালতে জমা দেওয়া হয়।
এজাহারে থাকা আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।
এজাহারবহির্ভূত ৬ আসামি হলেন—ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।
পলাতক তিন আসামি হলেন—মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুই জন এজাহারভুক্ত আসামি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত তিনটার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ পরে ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন